প্রায় ২১ বছর অসহায় জীবনযাপনের পর কালাম হাওলাদারের পরিবারের সকলেই উঠতে যাচ্ছেন একই উপজেলায় তার জন্মস্থান রাজাপুর গ্রামে বিনামূল্যে পাওয়া দুই কক্ষের একটি ঘরে, যা গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য নির্মাণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।
জেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শনিবার পাকা বাড়ি পেতে যাওয়া ভাগ্যবান ৪৩৩ জনের মধ্যে রয়েছেন কালামও। এ বাড়ির প্রতিটি ইউনিটে রয়েছে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট এবং বারান্দা। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
খুলনার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়ে খুশি গৃহহীন পরিবারগুলো
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নূন্যতম দুই শতাংশ জমিসহ এসব গৃহ পাচ্ছে মোট ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার।
১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়া কালাম বলেন, ‘কয়েক দশক পর অবশেষে আমি স্ত্রী, এক মেয়ে কন্যা এবং দুই ছেলেকে নিয়ে নিজের ঘরে উঠব।’
গত ২১ বছর ধরে দুলাভাইয়ের জমিতে একটি কুঁড়েঘরে বসবাস করে আসছিলেন কালাম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও মাগুরার ১৪৬৯ গৃহহীনকে বাড়ি দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
রিকশা মেরামতের দোকান চালানো কালাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ, আমাদের মতো দরিদ্র মানুষও এখন বাংলাদেশে একটি বাড়ির মালিকানার স্বপ্ন দেখতে পারছে।’
শরণখোলা উপজেলার কালাম হাওলাদার
‘সরকারের কাছ থেকে উপহারটি এমন সময়ে পেয়েছি যখন এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকসার জনপ্রিয়তার কারণে আমার আয় কমে এসেছে। মাসে প্রায় ৫ হাজার টাকা থেকে আমার আয় নেমে এসেছে ২ হাজার টাকায়,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এছাড়া কয়েক বছর আগে স্ত্রীর মেরুদণ্ডের সমস্যার চিকিৎসা করানোর জন্য বন্ধু এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছিলাম।’
নেত্রকোনার ৯৬০ গৃহহীন পরিবার ঘর পাচ্ছেন
বড় ছেলে হাসান হাওলাদার (১৮) গ্রামে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন জানিয়ে কালাম আরও বলেন, ‘সে (হাসান) মাসে দুই হাজার এবং আরেক ছেলে হাসিব হাওলাদার (১৩) ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে মাসে ছয় হাজার টাকা আয় করে। কিন্তু ভ্যান কেনার জন্য নেয়া দুটি ঋণের বিপরীতে আমি ৩,৪০০ টাকার মাসিক কিস্তি পরিশোধ করি। তবে আমাদের দুর্ভোগ শিগগিরই শেষ হতে পারে।’
মোল্লাহাট উপজেলার দাড়িয়ালা গ্রামের ৬২ বছর বয়সী আব্দুল গণি বলেন, ‘নিজের কোনো জমি বা বসবাস করার মতো ঘর না থাকায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে পথেঘাটে দিন-রাত কেটেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আজ জমিসহ বসবাসের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। এত সুন্দর ঘর পাব কখনো ভাবিনি।’
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক জানান, শনিবার জেলায় মোট ৪৩৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাকাবাড়ি পাচ্ছে।
মুজিব বর্ষে ঘর পাচ্ছেন ফরিদপুরের দেড় হাজার গৃহহীন পরিবার
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মাহবুব হোসেন বলেন, ‘জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্রও ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
এছাড়া, শনিবার ২১ জেলার ৩৬ উপজেলাজুড়ে প্রায় ৩,৭১৫টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এক মাসের মধ্যে আবাসন প্রকল্পের আওতায় আরও এক লাখ পাকাবাড়ি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য প্রায় নয় লাখ বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বাংলাদেশের কোনো মানুষ যাতে দেশে গৃহহীন না থাকে তা নিশ্চিত করাই এ প্রকল্পের লক্ষ্য।’
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আগে গৃহহীনদের বাসস্থান নিশ্চিত করা হবে: মন্ত্রী