বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেছেন, উচ্চশিক্ষার মান দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
ইউএনবির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ইউজিসি সদস্য এ কথা বলেন।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বজিৎ বলেন, উচ্চশিক্ষার গুণগত মান ধরে রাখতে হলে এ বিষয়ে আসন সংখ্যা কমাতে হবে।
তিনি বলেন, ‘একটি ক্লাসে ৩৫-৫০ জন শিক্ষার্থী থাকা উচিত। প্রয়োজনে বেশি সেকশন করে কম করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশে কখনও কখনও একটি বিভাগে ২০০০-৩০০০ শিক্ষার্থী থাকে, যা শিক্ষার মানকে অনেকাংশে ক্ষুণ্ন করে। আমরা যদি আসন সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারি তবে উচ্চশিক্ষার মান উন্নত হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বজিৎ বলেন, শিক্ষার কোয়ালিটি ধরে রাখতে হলে যেমন ভালো শিক্ষক প্রয়োজন তেমন শিক্ষার্থীর উপস্থিতিও জরুরি। পাশাপাশি আসন সংখা কম থাকতে হবে। বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলে কোয়ালিটি ধরে রাখা কঠিন।
তিনি বলেন, যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া উচিত এবং বেশি সেকশন রাখা উচিত। এছাড়া প্রত্যেকটি শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোয়ালিটি শিক্ষা অর্জনে কারিকুলাম থেকে শুরু করে স্কিল ডেভেলপমেন্ট অত্যন্ত জরুরি। দক্ষ ও ভালো শিক্ষককের পাশাপাশি অবকাঠামো এবং শিক্ষকদের ট্রেনিং ব্যবস্থা থাকতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, একটি ভালো শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করার জন্য শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
ইউজিসির মনিটরিং সিস্টেম সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্বজিৎ বলেন, আমরা সব সময় গুণগত মান বজায়া রেখে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে বলছি। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষায় কোয়লিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, সেখানেই আমরা সতর্ক করেছি।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি না হওয়ার পরামর্শ ইউজিসির
তিনি বলেন, সম্প্রতি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। উচ্চশিক্ষার মান বজায় রাখতে আমরা সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মনিটরিং করছি। বিশেষ করে আমি যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখি সেক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনেকগুলো ভালো মানের পড়াশোনা চালাচ্ছে। আবার কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ রয়েছে। যেসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ রয়েছে, তাদেরকে কঠোর বার্তা দিয়ে মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে।
বিশ্বজিৎ আরও জানান, ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ছয় মাসব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করার কথা ভাবছে, যাতে শিক্ষার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, যেসব ক্ষেত্রে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান এর সমস্যা রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে আমরা ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে এবং আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করার চিন্তাভাবনা করছি, তবে আমাদের দেশে যে সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা রয়েছে সে অনুযায়ী আমাদের ইউজিসির জনবলের সংখ্যা কম, সে কারণে হয়তো মনিটরিং ব্যবস্থা সেরকম হয়নি এটা আমাদের দুর্বলতা রয়েছে।
আরও পড়ুন: পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা যুক্ত করার আহ্বান ইউজিসির
অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে কেমন শিক্ষার কোয়ালিটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশ থেকে আমরা শিক্ষায় কতটুকু কোয়ালিটি এটি আসলে নির্ভর করে একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। আমাদের দেশে যেমন কিছু পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তাদের পড়াশুনার মান অনেক ভালো, যা বিদেশ থেকেও কম নয়। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয় নয়। সবক্ষত্রে আমরা এখনো অন্যান্য দেশ থেকে ভালো না হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা অনেকদুর এগিয়েছি। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালো পড়াশোনার মান রয়েছে আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় খারাপ হয়েছে তবে এটি পর্যায়ক্রমে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ডে একত্রিত করা যাবে না।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় না প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মান ভালো জানতে চাই বিশ্বজিৎ বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি ভাল এটা আলাদা পার্থক্য করা বিষয় না। একেকটি একেক ধরনের শিক্ষা অর্জন করা হয় সেটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভাল শিক্ষা অর্জন করা যেতে পারে আবার এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা অর্জন করা যেতে পারে হয়তোবা সেইক্ষেত্রে কোন কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালো করছে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালো করছে। সেটি নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় ওপর।
আরও পড়ুন: ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে: ইউজিসি