তারপর ফিরে আসেন দেশে। নিজ এলাকায় বরেন্দ্রভূমির রুক্ষ জমিতে মাল্টা বাগানের পরিকল্পনা শুরু করেন। সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টা চারা রোপন করেন। মাল্টা চারার মাঝে রোপন করেন পেয়ারা চারা।
মাল্টা বাগানের সার্বিক বিষয়ে কথা হয় কাউসার আলীর সাথে। তিনি বলেন, এলাকায় অনেকে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। যেহেতু এটি বিদেশি ফল এবং সুস্বাদু। দেশে এর চাহিদা আছে। চারা রোপনের তিন বছর পর ফল পাওয়া যায়।
কিন্তু তিন বছরতো অনেক সময়! কিভাবে এক বছরের মধ্যে বাগান পরিচর্যার খরচ উঠানো যায় সেই চিন্তা মাথায় রেখে মাল্টা চারার মাঝে পেয়ারার চারা রোপন করেন আলী। সেই সাথে বাগানের চারপাশে কলা, বেদানা, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ যাবতীয় সবজি চাষ শুরু করেন। এছাড়া লেবু, বিদেশি ওল, এলাচসহ বিভিন্ন গাছও লাগিয়েছেন তিনি।
বাগানের বয়স এখন প্রায় দুই বছর। এক বছরের মাথায় পেয়ারা এবং সবজি বিক্রি করে তিনি নিজের পরিবারের খরচ এবং বাগান পরিচর্যার খরচ উঠিয়েছেন। শ্রমিক এবং বাগানে সার, পানি বাবদ বাৎসরিক খরচ পড়ে প্রায় লাখ টাকার মতো। এক বছর পর থেকে বাগানের আয় দিয়ে বাগান পরিচর্যার খরচ বাদেও বাড়তি আয় করা শুরু করেছেন আলী।
তিনি জানান, তার গাছে মাল্টা ধরতে শুরু করেছে। গাছে ফুল আসা থেকে শুরু করে মাল্টা পাকতে সময় লাগে ৬ মাস। আগামী আগস্ট/সেপ্টেম্বর মাসে মাল্টা সংগ্রহের সময়। বাগান থেকে প্রায় ৪০ মণ মাল্টার ফলনের আশা করছেন তিনি। এসব মাল্টা বাজারে ১০০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি করা যাবে।
আলী বলেন, এটি মাল্টা গাছের স্বল্প পরিসরে প্রথম পর্যায়ের ফলন। এর পর গাছ বড় হবে এবং তিনগুন ফলন হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে মাল্টা বিক্রি করে ভালো লাভ করা যাবে।
তিনি জানান, তার কাছে কোনো কৃষি কর্মকর্তা আসেননি এবং পরামর্শ নিতে তাদের কাছেও যাননি। তিনি বিভিন্ন বাগান ঘুরে তাদের কাছে পরামর্শ নিয়েছেন। এছাড়া সমস্যায় পড়লে ইন্টারনেট থেকে জেনে কাজ করেন। এই সাড়ে তিন বিঘার বাগানে অধিকাংশ সময় নিজেই শ্রম দেন এবং পরিচর্যা করেন।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, গোদাগাড়ী বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় পানির সংকট দেখা যায়। আর মাল্টা চাষে পানি কম লাগে। কৃষক একটু পরিচর্যা করলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। এ কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন। এ উপজেলায় প্রায় ৯০ বিঘার মতো জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে।
বাগান থেকে সরাসরি বাজারে বিক্রি হওয়ায় ভোক্তা তাজা মাল্টা পাচ্ছেন। এটি আমদানিকৃত মাল্টার চেয়ে স্বাদে গুনে বেশি উন্নত বলে জানান তিনি।