বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখছেন, চীনা পোশাক শিল্পের শেয়ার কমে যাওয়ায় ইউরোপ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সম্ভাব্য বাজার তৈরি।
২০৩০ সালে বিশ্বব্যাপী পোশাক শিল্প বাজারের আকার হবে প্রায় এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এই সময়ে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা বৈশ্বিক বাজারের অন্তত ১০ শতাংশ বা ১০ হাজার কোটি ডলার পাওয়ার আশা করছেন।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পোশাক শিল্প বাজারের আকার প্রায় ৫৬ হাজার কোটি ডলারের। যেখানে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি অংশ হচ্ছে চার হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যা গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুনের হিসাবে ৩৬ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে একটি ভালো সূচনা দেখা যাচ্ছে। জুলাই থেকে আগস্টের আয় ৭১১ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দায়িত্বশীল হতে হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ইউএনবিকে জানিয়েছেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের জন্য সম্ভাব্য ক্রমবর্ধমান বাজার।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের দুই হাজার ডলারের অতিরিক্ত রপ্তানি সম্ভাবনা রয়েছে। আবদুর রাজ্জাক তথ্যটি উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে এই বাজারে দেশটি তার রপ্তানি সম্ভাবনার ৬০ শতাংশেরও কম ব্যবহার করতে পারে।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপম্যান্টেরও চেয়ারম্যান রাজ্জাক জানিয়েছেন, ১০ হাজার ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দেশটিকে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বার্ষিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
তিনি তার মতামত দিয়েছেন- পশ্চিমা ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে পশ্চিমা দেশের বাজারে যেহেতু চীনা পোশাক রপ্তানির শেয়ার হ্রাস পাচ্ছে, তাই বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্য রপ্তানি বাড়াতে এ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে।
তিনি বলেন, চীন কম মূল্য সংযোজিত পোশাক থেকে সরে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য একটি সুযোগ হতে পারে।
আরও পড়ুন: কানাডায় পোশাক রপ্তানি বাড়াতে চায় বিজিএমইএ
রাজ্জাক পরামর্শ দেন, ইইউ পোশাক বাজারের আকার ২০ হাজার কোটি ডলার, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার কোটি ডলার। চীনের বাজার প্রায় এক হাজার ১০০ ডলার, এদিকে ভারতের বাজার ১১০ কোটি ডলার। তাই বাংলাদেশকে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এর রপ্তানি অংশ যথাক্রমে ১২ ও ১৫ শতাংশ বাড়াতে হবে।
২০৩০ সালে ইইউ বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি অংশ হবে ছয় হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং যুক্তরাষ্টের বাজারে সংখ্যাটি দাঁড়াবে দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলারে। যা করোনা মহামারি সত্ত্বেও দেশের স্থিতিস্থাপকতার বিবেচনায় অর্জনযোগ্য দিক।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে দেশের মানুষের স্থিতিস্থাপকতার কারণে দেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মেয়াদে ইইউয়ের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। যা উক্ত বাজারে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখায়।
ডা. রাজ্জাক অবশ্য সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ১০ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা মসৃণ পথের হবে না। লজিস্টিক সুবিধা, বন্দর পরিচালনার ক্ষমতা ও দক্ষ শ্রম, পরিবেশ এবং শ্রমিক অধিকার উল্লেখযোগ্য বিবেচ্য দিক হতে পারে।
আগামী বছরগুলোতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে অবশ্যই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রপাতি সজ্জিত দক্ষ শ্রম এবং শ্রমিকদের মজুরি সন্তুষ্টির ওপর জোর দিতে হবে।
আরও পড়ুন: রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষিকে আরও উন্নত করতে চাই: কৃষিমন্ত্রী