রুশ বাহিনী কিয়েভ ও এর আশেপাশের বেশ কয়েকটি শহরে তাদের আক্রমণ জোরদার করেছে। শনিবার যুদ্ধের ৫২তম দিন নতুন করে তাদের আক্রমণাত্মক হামলার পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে।
কৃষ্ণ সাগরের যুদ্ধজাহাজ হারানোর কারণে এবং রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের ‘আগ্রাসনের’ কারণে ক্ষুব্ধ রাশিয়ার সামরিক কমান্ড ইউক্রেনের রাজধানীতে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে।
মস্কোর কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা শুধু ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা করছে।
প্রকৃত অবস্থা যদিও ভিন্ন। প্রতিদিন হামলায় অসংখ্য বেসামরিক নাগরিক মারা যাচ্ছে। শনিবারও উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের শহর খারকিভের একটি আবাসিক এলাকায় রকেট হামলায় এক শিশুসহ অন্তত ৯ জন মারা গেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কিয়েভ অঞ্চলে ৯ শতাধিক মানুষের লাশ উদ্ধার: পুলিশ
কিয়েভের ঠিক পাশের শহর ও গ্রাম থেকে রুশ সেনা পিছু হটার পর ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ ৯০০টিরও বেশি বেসামরিক মানুষের লাশ খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
শনিবার রাজধানীতে হামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরটির মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো যুদ্ধের আগে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া বাসিন্দাদের ফিরে না আসার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজধানীতে হামলা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না। যদি আপনার যেখানে আছেন সেটা নিরাপদ স্থান হয় এবং সেখানে আরেকটু বেশি সময় থাকার সুযোগ থাকে, তবে সেখানেই থাকুন।’
কিয়েভের দারনিটস্কি জেলায় হামলায় কী ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার জানা যায়নি। রাজধানীর দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে বিস্তৃত এই এলাকায় সোভিয়েত-শৈলীর অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক, নতুন শপিং সেন্টার এবং বড়-বক্স খুচরা দোকান, শিল্প এলাকা এবং রেলইয়ার্ড রয়েছে।
তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ বলেছেন, দারনিটস্কিতে একটি সাঁজোয়া যানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা শান্তির প্রধান পদক্ষেপ: জেলেনস্কি
রুশ সামরিক বাহিনী এই সপ্তাহে রাজধানীতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর এটি ছিল কিয়েভ এলাকায় দ্বিতীয় হামলা। শুক্রবার আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্রে আঘাত হানে।
রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নতুন করে এমন সময় শহরটিতে আঘাত হানে যখন বাসিন্দারা নতুন করে নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসছিল, বিদেশি দূতাবাসগুলো পুনরায় খোলার পরিকল্পনা চলছে এবং কিয়েভ থেকে রুশ সেনাদের প্রত্যাহারের পরে শহরের যুদ্ধপূর্ব অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করে।
শনিবার কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়সহ দেশজুড়ে আটটি অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া যায়।
পশ্চিম ইউক্রেনের এলভিভের গভর্নর বেলারুশ থেকে উড্ডয়নকারী রাশিয়ান এসইউ-৩৫ দ্বারা এই অঞ্চলে বিমান হামলার কথা জানিয়েছেন।
রুশ সামরিক বাহিনী সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে গোলাবর্ষণ বাড়িয়েছে। শুক্রবারের হামলায় এ শহরের অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে।
খারকিভের মেয়র ইহোর তেরেখভ বলেছেন, শনিবারও এখানে হামলা হয়েছে। এদিনের হামলায় তিনজন নিহত ও ৩৪ জন আহত হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বন্দর নগরী মারিউপোল অবরুদ্ধতা অব্যাহত রয়েছে। ক্রমে যা যা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।