ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত দুই ব্যক্তি গ্রুপের কোম্পানিগুলো থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের স্টক কিনেছেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। সেই সঙ্গে ভারতীয় আইন লঙ্ঘন করে গোপনে এসব শেয়ার কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটি নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজারের নিয়ম অনুযায়ী, কোম্পানির অন্তত ২৫ শতাংশ শেয়ার জনসাধারণের ক্রয়ের জন্য রাখা হয়।
অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই ব্যক্তি ‘দ্বীপদেশ মরিশাসের একটি অস্বচ্ছ বিনিয়োগ তহবিল’ ব্যবহার করে এসব শেয়ার কিনেছেন। পাবলিক শেয়ার প্রায় ১৪ শতাংশই তারা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত ওসিসিআরপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা একাধিক ট্যাক্স হেভেন, ব্যাংক রেকর্ড ও আদানি গ্রুপের অভ্যন্তরীণ ইমেলের ফাইলগুলোর উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।
প্রতিবেদনে দুই বিনিয়োগকারীর নাম বলা হয়েছে নাসের আলি শাবান আহলি ও চ্যাং চুং-লিং।
বলা হয়েছে, আদানি পরিবারের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা গ্রুপের কোম্পানিতে পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন: আদানি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই বিনিয়োগকারী ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চারটি আদানি কোম্পানিতে বড় পরিমাণে শেয়ার লেনদেন করেছেন।
যদিও আদানি গ্রুপ প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে তার তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আইন মেনে চলছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানির স্টক ৪ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
তবে এপি স্বাধীনভাবে এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মরিশাস তহবিলের মাধ্যমে দুই ব্যক্তি আদানি স্টক কেনা-বেচা করেছিলেন এবং ‘এর মাধ্যমে যথেষ্ট লাভ করেছিলেন।’
এতে বলা হয়েছে, এই ধরনের কাজ আইনের লঙ্ঘন কি না সেই প্রশ্নটি আহালি ও চ্যাং আদানি গ্রুপের প্রোমোটারদের পক্ষে কাজ করছে কি না তার উপর নির্ভর করে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘যদি ওই দুজন আদানি গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করে, তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা আইন অনুমোদিত ৭৫ শতাংশেরও বেশি শেয়ারের মালিক।’
জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শর্ট-সেলিং হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফার্ম আদানি গ্রুপ ও তার প্রধান গৌতম আদানিকে ‘স্টক ম্যানিপুলেশন’ এবং ‘অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতির’ জন্য অভিযুক্ত করেছিল। আদানি গ্রুপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।
আরও পড়ুন: হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে ভারতের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আদানির
ব্লুমবার্গের বিলিয়নেয়ার ইনডেক্স অনুসারে, সেই অভিযোগগুলোর পরে আদানি গ্রুপ ও গৌতম আদানি ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সম্পদ হারিয়েছে।
এক সময়ে এশিয়ার সর্বোচ্চ ধনী গৌতম আদানি বর্তমানে আনুমানিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে তালিকায় ২০তম স্থানে রয়েছেন।
৬১ বছর বয়সী আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়।
সমালোচকরা বলছেন, আদানির সাফল্যের বেশিরভাগই তার সরকার এবং মোদির সান্নিধ্য থেকে এসেছে। মোদিও মাঝে মাঝে আদানি জেট ব্যবহার করে প্রচার চালিয়েছেন।
যদিও বরাবরই সরকারের কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আদানি।
হিন্ডেনবার্গের দাবির পরে বিনিয়োগকারীরা আদানির থেকে কিছুটা মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ায় অবকাঠামো, কয়লা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং মিডিয়াসহ তার সংস্থাগুলো কয়েক বিলিয়ন ডলার বাজার মূল্য হারিয়েছে।
মার্চ মাসে দেশের বাজার নিয়ন্ত্রক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়াকে, আদানি গ্রুপ নিয়ম লঙ্ঘন বা স্টক মূল্যের হেরফের করেছে কি না তা তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন ভারতের শীর্ষ আদালত।
স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, বোর্ড গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিল, তাদের তদন্ত প্রায় সম্পূর্ণ এবং অফশোর ডিলের একটি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মুকেশ আম্বানিকে হারিয়ে এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি