বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএর সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত নির্বাচনের তুলনায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার কাছে বেশ কিছু আসন হারানোর পরও টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পথে মোদি।
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার পেছনে গত মেয়াদে তার শাসনামলে ভারতের মিশ্র অর্থনৈতিক রেকর্ড ও রাজনৈতিক মেরুকরণের মতো বিষয়গুলো প্রভাব ফেলেছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
মঙ্গলবার ফলাফল ঘোষণার পর বিজেপির প্রধান কার্যালয়ের সামনে সমর্থকদের উদ্দেশে মোদি বলেন, ‘আজকের এই জয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের জয়। নির্বাচনে ভারতের ভোটাররা বিজেপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি অগাধ আস্থার প্রকাশ ঘটিয়েছে।’
আরও পড়ুন: ভারতের নির্বাচনে ভোটদানের বিশ্ব রেকর্ড, বিস্ময়কর বললেন সিইসি
দেশটির নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফল অনুসারে, মোদির এনডিএ জোট ২৯৪ আসনে জয়লাভ করেছে, যেখানে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন। তবে গতবারের তুলনায় এই সংখ্যা নিতান্তই কম। অন্যদিকে, বিজেপির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩২ আসন।
শুধু বিজেপি নেতারা জিতেছেন ২৪০টি আসনে। এর ফলে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠা অর্জনে ব্যর্থ হলো দলটি। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও ৩০৩ সিট পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও চাইলে শুধু তারাই সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করে বিজিপি।
২৭২ আসন না পাওয়ায় এবার আর এককভাবে সরকার গঠনের দিকে যেতে পারছে না দলটি। জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে মোদির।
ফল ঘোষণার আগে মোদি জানিয়েছিলেন, তার দলের ৩৭০ আসনে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এবং জোট শরিকরা আরও ৩০টি আসনে জিততে পারে। তবে ঘোষণার পর বিজেপির জন্য এটি বিপর্যয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ভারতীয় ভোটারদের আর সহজভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। চাকরি ও দেশের অর্থনীতি যে গুরুত্বপূর্ণ, ভোটাররা তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। নির্বাচনের ফল থেকে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে, চাকরি নাগরিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: নির্বাচনি জনসভায় 'অনুপ্রবেশকারী' বলায় মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ মোদির বিরুদ্ধে
কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর দক্ষিণ এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক মিলান বৈষ্ণব বলেছেন, জোট শরিকদের সদিচ্ছার ওপর এখন ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হবে মোদিকে। যেকোনো নীতি নির্ধারণ, এমনকি সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও তারা বড় সুবিধা চাইবে।
দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে প্রতাপ ভানু মেহতা নামের এক রাজনৈতিক ভাষ্যকার বলেছেন, ভোটের ফলাফল মোদির কর্তৃত্বকে দমন করেছে। তিনি নিজেই নিজের জন্য এই অবস্থান তৈরি করেছেন। আজ থেকে তিনি শুধুই একজন রাজনীতিক, জনগণ তার ক্ষমতা খর্ব করেছে।
সাত ধাপে ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা দীর্ঘ এ ভোট কর্মযজ্ঞে ভারতের ৬৪ কোটির বেশি ভোটার তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করেন।
‘বিজেপির পতনের’ এই নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর কংগ্রেস দাবি করেছে, এটি মোদির নৈতিক ও রাজনৈতিক পতন। আর এটাই তাদের জয়।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি জনতার জয়, গণতন্ত্রের জয়।’
তৃতীয়বার সরকার গঠন করে ভারতের অর্থনীতিকে বর্তমানের পঞ্চম অবস্থান থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন বাড়ানো, যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, রপ্তানি বৃদ্ধি ও কৃষকদের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ৭৩ বছর বয়সী এ বিজেপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘বড় বড় সিদ্ধান্তের একটি নতুন অধ্যায় দেখবে দেশ। এটি মোদির গ্যারান্টি।’
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর পর প্রথম কোনো নেতা হিসেবে টানা তৃতীয়বার দেশ শাসন করতে চলেছেন মোদি। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে ৩০ বছর ধরে জোট সরকারে শাসিত হয়েছে ভারত।