পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বাজুর জেলায় রবিবার (৩০ জুলাই) একজন কট্টরপন্থী ধর্মগুরু ও রাজনৈতিক নেতার সমর্থকদের সমাবেশে শক্তিশালী বোমা হামলা করা হয়েছে।
দেশটির পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমপক্ষে ৪৪ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছে।
সিনিয়র পুলিশ অফিসার নাজির খান বলেন, বাজুর জেলার রাজধানী খারের উপকণ্ঠে মাওলানা ফজলুর রহমানের জমিয়ত উলেমা ইসলাম (জেইউআই) পার্টির কর্মী সম্মেলনে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এপি’র ভিডিওতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে আহত ব্যক্তিদের ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সমাবেশে আসা ৪৫ বছর বয়সী আদম খান পায়ে ও দুই হাতে স্প্লিন্টারে আঘাত পান।
তিনি বলেন, বিকাল ৪টায় বোমা হামলা হয় এবং তিনি মাটিতে পড়ে যান।
তিনি বলেন, ‘চারপাশে আমি শুধু ধুলো ও ধোঁয়া দেখতে পাই।’
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বন্দুকযুদ্ধে ৩ সেনাসদস্য ও ২ বিদ্রোহী নিহত
কেউ তাৎক্ষণিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠী আফগানিস্তানে সীমান্তের বাইরেও হামলা করা শুরু করছে।
খান বলেন, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
একটি বাজারের কাছে একটি হলের মধ্যে জেইউআই কর্মী সম্মেলন আয়োজন করা হয়। তবে, সমর্থক সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাইরে তাঁবু করা হয়। এসময় দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা অনুষ্ঠানস্থলটি পাহারা দিচ্ছিল।
খাইবার পাখতুনখোয়া পুলিশ প্রধান আখতার হায়াত গন্ডাপুর বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে দলীয় স্বেচ্ছাসেবকদের নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে।
তিনি বলেন, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা আলামত সংরক্ষণের জন্য ঘটনাস্থলে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছেন।
জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফয়সাল খান জানান, বিস্ফোরণে নিহত ৪৪ জনের লাশ এবং প্রায় ২০০জন আহত ব্যক্তি খারের প্রধান হাসপাতালে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর এবং তাদের পেশোয়ার এবং পার্শ্ববর্তী জেলা দিরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভি এবং অন্যান্য নেতারা এই হামলার নিন্দা করেছেন। তারা আহত ও শোকাহত পরিবারকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভারী বর্ষণে নিহত ২৫, আহত ১৪৫
নিহতদের মধ্যে রেহমানের দলের স্থানীয় প্রধান মাওলানা জিয়াউল্লাহও রয়েছেন।
সিনেটর আবদুর রশিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা জামালউদ্দিনও মঞ্চে ছিলেন; তবে তিনি অক্ষত রয়েছেন।
রেহমান সমাবেশে ছিলেন না বলে দলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দলের আঞ্চলিক প্রধান রাশেদ বলেছেন, হামলাটি নভেম্বরে সংসদ নির্বাচনের আগে জেইউআইকে মাঠ থেকে সরানোর চেষ্টা।
তিনি বলেন, এ ধরনের কৌশল কাজ করবে না।
রেহমানকে তালেবানপন্থী ধর্মগুরু বলে মনে করা হয় এবং তার রাজনৈতিক দল ইসলামাবাদের জোট সরকারের অংশ। আসন্ন নির্বাচনের জন্য সমর্থকদের একত্র করতে সারাদেশে সভা-সমাবেশ করছে দলটি।
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় আমাদের অনেক সহকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। আমি ফেডারেল ও প্রাদেশিক প্রশাসনকে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা সুবিধা দিতে বলব।’
মোহাম্মদ ওয়ালি বলেন, তিনি একজন বক্তার বক্তব্য শুনছিলেন, তখন বিকট বিস্ফোরণে সাময়িকভাবে বধির হয়ে যান।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে কয়লা খনি নিয়ে দুই উপজাতির মধ্যে সংঘর্ষে নিহত ১৫
তিনি বলেন, ‘আমি এক গ্লাস পানি আনতে ওয়াটার ডিসপেনসারের কাছে গিয়েছিলাম, আকস্মিক বোমা বিস্ফোরণের ধাক্কায় আমি মাটিতে পড়ে যাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হাসিমুখে সমাবেশে এসেছিলাম। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কান্নারত আহত মানুষ এবং তাদের প্রিয়জনের লাশ নিয়ে স্বজনদের কাঁদতে দেখেছি।’
বাজুর একটা সময় একটি উপজাতীয় অঞ্চল ছিল, কিন্তু এখন একটি জেলা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী উপজাতীয় অঞ্চল থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করার জন্য ব্যাপক অভিযান চালানোর আগ পর্যন্ত ইসলামিক জঙ্গিদের একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল এটি। জঙ্গিরা এখনও প্রায়ই নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিকদের ওপর হামলা চালায়।