মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় স্টার শিপ গ্রুপ অব কোম্পানিজ, ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়েস গ্রুপ কোম্পানিস লিমিডেট(আইজিজি) ও স্কাই কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিডেট রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, সামরিক বাহিনীর অস্ত্রের তৎপরতা ও রাজস্ব আয় সীমিত করতে তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী আমান্ডা মিলিং যুক্তরাজ্যের এই মনোভাবের কথা নিশ্চিত করেছেন। আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলায় হস্তক্ষেপ করতে এটি করছেন।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মিয়ানমার জেনোসাইড কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে কিনা তা এই মামলার রায়ে নির্ধারণ হবে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দেশটির রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করে।
পড়ুন: মিয়ানমারে সহিংসতায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত: জাতিসংঘ
জাতিসংঘের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা ও সাত লাখ ৪০ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করে প্রতিবেশী বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী যৌন নির্যাতন, শিশুদের নির্যাতন করে মাটিতে পুঁতে ফেলা এবং গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার মতো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
এগুলো হলো সেনাবাহিনীর দায়মুক্তির জন্য কর্মকান্ড এবং যুক্তরাজ্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে মিয়ানমারের বিরোধী গণতন্ত্রপন্থীদের দমন করতে তারা একই কৌশল নিয়েছে।
যুক্তরাজ্য নিশ্চিত যে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জাতিগত নিধন করা হয়েছে, এবং এখনও মিয়ানমারে যে বর্বরতা চলছে তা বন্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে দায় নিতে হবে।
আমান্ডা মিলিং বলেন, যারা আমাদের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ছোট ও ধ্বংস করতে চায় যুক্তরাজ্য সব সময় তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
‘পাঁচ বছর ধরে আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করে পাশে আছি এবং ভয়ানক জাতিগত ধ্বংসযজ্ঞের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিন্দা জানিয়েছি।
মন্ত্রী মিলিং বলেন, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলায় মধ্যস্থতা এবং নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ২০১৭ সালের নৃশংসতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অর্থনীতি ও অস্ত্র
সরবরাহ সীমিত করাতে যুক্তরাজ্যের অব্যাহত সমর্থনের ব্যাপারে শক্তিশালী বার্তা দেয়। ২০১৭ সালের সহিংসতার লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের পরিচয় ও ভবিষ্যৎ বংশধর ধ্বংস করা।
রাখাইন রাজ্যে থাকা ৬ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং নিয়মিত বৈষম্যের মাধ্যমে তাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা সীমিত করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্য আবারও ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনকে উদ্ধৃত করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্য ২০১৭ সাল থেকে শরণার্থী শিবিরগুলোতে প্রয়োজনীয় খাবার, তাবু, পয়নিষ্কাশন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা খাতে ৩৩০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সত্য আড়ালের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ