সৃজনশীলতার মুক্ত অনুশীলন ও বাস্তবধর্মী গবেষণা সুষ্ঠু শিক্ষা ব্যবস্থার দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ, যার সাফল্য আসে সঠিক বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনের তাগিদে এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি বিকশিত করে একটি দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে। ফলশ্রুতিতে উন্নত হয় সেই দেশের মানুষের জীবনযাত্রা। এমনই রূপরেখাকে লালন করে চলা উন্নত দেশগুলোর গর্বিত প্রতিনিধি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশ নিউজিল্যান্ড। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিদ্যাপীঠ এবং শিক্ষার্থীবান্ধব ভূ-খণ্ড দেশটিকে করে তুলেছে উচ্চাকাঙ্ক্ষী মেধাবীদের স্বর্গরাজ্য। চলুন, নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কেন নিউজিল্যান্ড উচ্চশিক্ষার অন্যতম সেরা গন্তব্য
বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির আশ্রয়স্থল নিউজিল্যান্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১ দশমিক ৩২৩ গ্লোবাল পিস ইনডেক্স নিয়ে বিশ্বের শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় কিউইদের অবস্থান চতুর্থ।
ইংরেজি ভাষা প্রধান দেশ হওয়াতে নিমেষেই এখানকার পরিবেশের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা।
নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডিগ্রি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশেষ করে পরিবেশ বিজ্ঞান, কৃষি ও বায়োটেকনোলজির মতো ক্ষেত্রগুলোতে গবেষণার জন্য এরা বিশ্ব জুড়ে সুপরিচিত। সেগুলোর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ড কিউএস বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এ ৬৫তম অবস্থানে রয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বউদ্যোগেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কলারশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে।
অন্যদিকে, দেশের ক্রমবর্ধমান উদ্ভাবন কেন্দ্রগুলোতে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে উদ্যোক্তা এবং নতুন প্রযুক্তির জন্য সহায়ক মঞ্চ। এরই ধারাবাহিকতায় অত্যাধুনিক প্রকল্পগুলোতে বাড়ছে নতুন শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনের জন্য সমূহ সম্ভাবনার দেশ নিউজিল্যান্ড।
আরো পড়ুন: অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও স্কলারশিপসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
নিউজিল্যান্ডের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও চাহিদা সম্পন্ন কোর্সের তালিকা
বিশ্বজুড়ে বহুল সমাদৃত নিউজিল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো-
· ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ড
· ইউনিভার্সিটি অব ওটাগো
· ম্যাসি ইউনিভার্সিটি
· ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটন
· ইউনিভার্সিটি অব ক্যান্টারবেরি
· ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইকাটো
· লিঙ্কন ইউনিভার্সিটি
· অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
আরো পড়ুন: চেক প্রজাতন্ত্রে উচ্চশিক্ষা: পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নের সেরা বিষয়গুলো-
· বিজ্ঞান (জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা)
· ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল, ইলেক্ট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল)
· ব্যবসা ও অর্থনীতি
· কলা ও মানবিক (ইংরেজি সাহিত্য, ইতিহাস)
· আইন
· মেডিসিন ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান
· কম্পিউটার সায়েন্স
· তথ্য-প্রযুক্তি
· ট্যুরিজম ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট
· কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
· আর্কিটেক্চার
আরো পড়ুন: হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের উপায়, পড়াশোনার খরচ, স্কলারশিপ, ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
নিউজিল্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়
কিউই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি কার্যক্রম সাধারণত বছরের দুটি সময়ে শুরু হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে বসন্তে তথা ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এবং শরতে অর্থাৎ জুলাই থেকে আগস্ট।
এখানে বসন্তের ভর্তি মৌসুমটি আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কেননা এ সময় অনেক বেশি কোর্স থেকে নিজের কাঙ্ক্ষিত কোর্সটি পাওয়ার সুযোগ থাকে। সেই সঙ্গে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই বসবাসের সুযোগ। তাছাড়া সেমিস্টারের শুরুতেই ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ সম্ভাবনা থাকে খণ্ডকালীন চাকরি মিলে যাওয়ার।
শরৎ ও বসন্ত ছাড়াও বিগত বছরগুলো ভর্তির নতুন আরেকটি পদ্ধতি চালু হয়েছে, যেটি রোলিং ইন্টেক নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বছরের যে কোনো সময়েই ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারে।
এই পদ্ধতিতে সবগুলো সিট পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ভর্তির আবেদন চলতে থাকে। রোলিং ইন্টেকের প্রধান সুবিধা হলো এখানে সর্বাধিক চাহিদা সম্পন্ন প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
তবে সব বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রোগ্রামেই রোলিং ইন্টেক থাকে না। এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের নির্দেশনাগুলো চেক করতে হবে।
ভর্তির আবেদনের একমাত্র উপায় হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে যেয়ে অনলাইনে আবেদন করা। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইন আবেদনের পর যাবতীয় কাগজপত্র কুরিয়ার করার প্রয়োজন হতে পারে। আবেদনের সময়সীমা এবং ভর্তির পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
· বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে পূরণকৃত আবেদনপত্র
· উচ্চ মাধ্যমিক/স্নাতক পরীক্ষার সার্টিফিকেট এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট
· ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ আইইএলটিএস (স্কোর: ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭) বা টোফেল (স্কোর: ৭৯ থেকে ১০০)
· কারিকুলাম ভিটা (সিভি) বা পোর্টফোলিও
· স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি) বা পার্সনাল স্টেটমেন্ট
· রিকমেন্ডেশন লেটার (১ থেকে ৩টি)
· গবেষণা প্রস্তাব (পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য)
· বৈধ পাসপোর্ট
· আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ (ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট বা অন্যান্য আর্থিক নথি)
· স্কলারশিপপ্রাপ্ত হলে তার প্রমাণপত্র
· বিদেশী শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য বীমা
· আবেদন ফি দেওয়ার রশিদ
· বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার স্কোরকার্ডের জন্য অতিরিক্ত নথি (জিআরই বা জিম্যাট)
আরো পড়ুন: ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট কী? কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
নিউজিল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসার অনলাইন আবেদন পদ্ধতি
এই ভিসার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৪ বছর পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলটাইম অধ্যয়ন করা যায়। স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনের পিক টাইম হচ্ছে অক্টোবর থেকে মার্চ। তাই রওনা হওয়ার অন্তত ৩ মাস আগে থেকে আবেদন শুরু করা জরুরি।
সরাসরি অনলাইনে আবেদনের জন্য-
https://www.immigration.govt.nz/new-zealand-visas/visas/visa/full-fee-paying-student-visa- এই লিংকে যেয়ে নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদানপূর্বক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যানকপি আপলোডের মাধ্যমে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
· নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদানকৃত ভর্তির অফার লেটার
· ১ কপি ছবি, যার সফট কপিটি হবে-
o ৫০০ কিলোবাইট থেকে ৩ মেগাবাইটের মধ্যে
o রেজুলেশন ৯০০ x ১ হাজার ২০০ পিক্সেল থেকে ২ হাজার ২৫০ x ৩ হাজার পিক্সেলের মধ্যে
o ফাইলটি হবে জেপিজি বা জেপিইজি ফরম্যাটের
· বৈধ পাসপোর্ট
· চেস্ট এক্স-রেসহ মেডিকেল সার্টিফিকেট
· পুলিশ সার্টিফিকেট
· উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে নিউজিল্যান্ড গমন নিয়ে একটি কভার লেটার বা পার্সোনাল স্টেটমেন্ট
· বিগত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট
· নিউজিল্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহকৃত অধ্যয়ন ফি প্রদানের রশিদ (অন্তত এক বছর বা একটি প্রোগ্রামের ফি হতে হবে)
· আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ: বছরে ২০ হাজার (প্রতি নিউজিল্যান্ড ডলার ৭৩ দশমিক ৯৫ বাংলাদেশি টাকা হিসাবে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪ টাকা)। ১ বছরের কম সময়ের প্রোগ্রামের জন্য প্রতি মাসে ১ হাজার ৬৬৭ নিউজিল্যান্ড ডলার বা ১ লাখ ২৩ হাজার ২৭৮ টাকা। এর সঙ্গে নিউজিল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি বিমান টিকিট কেনার জন্য অতিরিক্ত অর্থ থাকতে হবে। পুরো তহবিলের প্রমাণ হিসেবে ন্যূনতম তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে।
আরো পড়ুন: আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
এছাড়া এই তহবিল প্রদর্শনের সমতুল্য মাধ্যমগুলো হলো-
o অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে তিন মাস ধরে গচ্ছিত থাকা ফিক্সড ডিপোজিট
o স্থায়ী কোনো সম্পত্তি, যেমন- বাড়ি ভাড়া থেকে অর্জিত আয় (এক্ষেত্রে বাড়ির খাজনা পরিশোধের রশিদ যুক্ত করতে হবে)
o শিক্ষা ঋণ (এক্ষেত্রে মাল্টি-ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে সেই ঋণ অনুমোদনের চিঠি দিতে হবে)
শিক্ষার্থী যদি নিজেই নিজের খরচ বহন করেন তবে তাকে যে নথিগুলো দেখাতে হবে-
o আয়ের প্রমাণস্বরূপ নিয়োগকর্তার কাছ থেকে কর্মসংস্থানের সনদপত্র যেখানে শিক্ষার্থীর পদ এবং বেতন উল্লেখ থাকবে।
o ট্যাক্স রিটার্ন
প্রদর্শনকৃত তহবিলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবশ্যই শিক্ষার্থীর নিজের বা অনুমোদিত কোনো আর্থিক গ্যারান্টার বা স্পন্সরের নামে থাকতে হবে। একজন শিক্ষার্থী শুধুমাত্র একজন স্পন্সরকে দেখাতে পারবেন। এই স্পন্সর হতে হবে শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্য, যেমন- বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদী। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও গ্যারান্টরের সম্পর্ক প্রমাণের স্বার্থে তার যে নথিগুলো দিতে হবে, তা হলো-
o পাসপোর্ট, জন্ম সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)
o সরকার-প্রদত্ত শংসাপত্র যেমন- নাগরিকত্বের শংসাপত্র বা বিবাহের সনদ
তার আয়ের বৈধতার জন্য যে নথিগুলো দরকার হবে তা হলো-
o নিয়োগকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত কর্মসংস্থানের শংসাপত্র (পদ এবং বেতন উল্লেখসহ)
স্পন্সরকে এই দুটি ফর্ম পূরণ করতে হবে-
o স্পন্সরশিপ ফর টেম্পরারি এন্ট্রি
(https://www.immigration.govt.nz/documents/forms-and-guides/inz1025.pdf)
o ফিন্যান্সিয়াল আন্ডারটেকিং ফর এ স্টুডেন্ট
(https://www.immigration.govt.nz/documents/forms-and-guides/inz1014.pdf)
· নিউজিল্যান্ডে অধ্যয়নকালে শিক্ষার্থীর জন্য নির্ধারিত আবাসনের প্রমাণপত্র
· স্কলারশিপ পেয়ে থাকলে তার প্রমাণ
· চিকিৎসা এবং যাতায়াত বীমা (এর মধ্যে অধ্যয়নের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জীবনযাত্রা বাবদ সম্ভাব্য ব্যয় এবং নিউজিল্যান্ডে বিমানে আসা-যাওয়ার খরচ সঙ্কুলান হতে হবে)
· বাংলাদেশ থেকে নিউজিল্যান্ডের প্লেনের টিকিট
· ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ (আইইএলটিএস বা পিয়ারসন টেস্ট ইংলিশ বা টোফেল সনদ)
আরো পড়ুন: রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি
অনলাইনে ভিসা আবেদন ফি ৪৩০ নিউজিল্যান্ড ডলার কিংবা ৩১ হাজার ৮০০ টাকা, যেটি ভিসা, মাস্টারকার্ড বা ইউনিয়ন পে-এর মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে।
এই ফির মধ্যে আন্তর্জাতিক ভিজিটর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম লেভি (আইভিএল) বাবদ ৩৫ ডলারের (২ হাজার ৫৮৮ টাকা) একটি চার্জ রয়েছে। এটি আগামী ১ অক্টোবর থেকে ১০০ ডলার (৭ হাজার ৩৯৫ টাকা) করা হবে।
স্টুডেন্ট ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় ও ভিসাপ্রাপ্তি
ভিসা প্রস্তুত হতে কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ সময় লাগে। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে এই স্টুডেন্ট ভিসা হিসেবে পাসপোর্টে মূলত কোনো ভিসা স্টিকার দেওয়া হয় না। এর পরিবর্তে তা ইলেকট্রনিকভাবে প্রার্থীর পাসপোর্টের বিশদ বিবরণের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এটি প্রার্থী নিউজিল্যান্ডের অনলাইন ইমিগ্রেশনে নিজের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেখতে পারেন। তাছাড়া ভিসা অনুমোদনের বিষয়টি ই-মেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। অর্থাৎ অনলাইনে সব আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে যায়।
নিউজিল্যান্ডে প্রবেশের পূর্ব মুহূর্তে প্রার্থীকে শুধু পাসপোর্ট দেখাতে হয়। তখন পাসপোর্ট নাম্বার অনুসারে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কাস্টম্স কর্মকর্তা ভিসার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন।
আরো পড়ুন: কীভাবে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন?
নিউজিল্যান্ডে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
এখানে আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামগুলোতে অধ্যয়নের জন্য প্রতি বছর ব্যয় হতে পারে ২০ থেকে ৪০ হাজার নিউজিল্যান্ড ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪ থেকে ২৯ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮ টাকার সমান। মাস্টার্সের জন্য ফি বছর ২০ থেকে ৪৫ হাজার ডলার (১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪ থেকে ৩৩ লাখ ২৭ হাজার ৮২৭ টাকা) বাজেট রাখতে হবে। আর ডক্টরাল ডিগ্রির জন্য প্রয়োজন হবে ৬ হাজার ৭০০ থেকে ৯ হাজার ৫০০ নিউজিল্যান্ড ডলার (৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭৬ থেকে ৭ লাখ ২ হাজার ৫৪১ টাকা)। এমবিএ করতে খরচের পরিমাণ ৩১ হাজার ৭৫০ থেকে ৫৫ হাজার ডলার (২৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬৭ থেকে ৪০ লাখ ৬৭ হাজার ৩৪৪ টাকা)।
নিউজিল্যান্ডে মোটামুটি অল্প খরচের অধ্যয়ন ফি রয়েছে ওয়াইকাটো বিশ্ববিদ্যালয়ে, যা বার্ষিক ২৫ থেকে ৫৫ হাজার নিউজিল্যান্ড ডলারের মত। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্যমান ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৭৯৩ থেকে ৪০ লাখ ৬৭ হাজার ৩৪৪ টাকা। তারপরে রয়েছে ম্যাসি ইউনিভার্সিটি, যেখানে খরচ হতে পারে ২৩ থেকে ৫৫ হাজার ডলার (১৭ লাখ ৮৮৯ থেকে ৪০ লাখ ৬৭ হাজার ৩৪৪ টাকা)।
মানের ভিত্তিতে নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে জীবনযাত্রার খরচ বিভিন্ন রকম। ওয়েলিংটনের মতো ব্যয়বহুল শহরে থাকার মাসিক খরচ গড়ে ৪ হাজার ৪০০ ডলার (৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮৮ টাকা)। অকল্যান্ডে থাকার জন্য মাসিক বাজেট রাখতে হবে ৪ হাজার ১৫ ডলার (২ লাখ ৯৬ হাজার ৯১৬ টাকা)। ক্রাইস্টচার্চে ব্যয় হতে পারে ৩ হাজার ৮৮৪ ডলার (২ লাখ ৮৭ হাজার ২২৮ টাকা)। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী শহর হ্যামিল্টনে জীবনযাত্রার জন্য ৩ হাজার ১৮২ ডলারই (২ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৪ টাকা) যথেষ্ট।
এই খরচগুলোর মধ্যে বাসা ভাড়া, ইউটিলিটি, মোবাইল, খাবার, যাতায়াত এবং পরিধেয় কেনা অন্তর্ভুক্ত। তবে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় আবাসন খাতে; প্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ নিউজিল্যান্ড ডলার। এই পরিমাণটি ১ লাখ ১৮ হাজার ৩২৩ থেকে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭৯ টাকার সমতুল্য।
আরো পড়ুন: ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ, ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
নিউজিল্যান্ডে জীবনযাত্রার আর্থিক ব্যবস্থাপনা
নিউজিল্যান্ডে স্কলারশিপ
এই ব্যয়ভারের চাপকে যথেষ্ট কমিয়ে দিতে নিউজিল্যান্ডে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের সুযোগ। তার মধ্যে সরকারি প্রকল্প নিউজিল্যান্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ১০ হাজার নিউজিল্যান্ড ডলার (৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৭ টাকা) পর্যন্ত বৃত্তি দিয়ে থাকে।
ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এক্সিলেন্স কার্যক্রম থেকে অধ্যয়ন ফিতে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার (৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৭ টাকা) ছাড় পাওয়া যায়।
ইউনিভার্সিটি অব ওটাগোর অধীনে পরিচালিত প্রকল্পের নাম ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার্স স্কলারশিপ। এখানে গোটা ১ বছরের অধ্যয়ন ফি মওকুফ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে প্রতি বছরে ১৮ হাজার ডলারের (১৩ লাখ ৩১ হাজার ১৩১ টাকা) উপবৃত্তি থাকে।
মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য অধ্যয়ন, আবাসন এবং স্বাস্থ্য বীমার খরচ বহন করে নিউজিল্যান্ড কমনওয়েলথ স্কলারশিপ। এখানে আরও পাওয়া যায় বার্ষিক ৩ হাজার ডলারের (২ লাখ ২১ হাজার ৮৫৫ টাকা) উপবৃত্তি এবং জীবনযাত্রার জন্য প্রতি সপ্তাহে ৪৯১ ডলার (৩৬ হাজার ৩১০ টাকা)।
ভূ-পদার্থবিদ্যা ও ভূ-বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে এসইজি স্কলারশিপ। এখানে নির্বাচিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ৩ হাজার ডলার (২ লাখ ২১ হাজার ৮৫৫ টাকা) করে ভাতা দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন: চীনে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
খণ্ডকালীন চাকরি
নিউজিল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসায় সেমিস্টার চলাকালে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা খণ্ডকালীন এবং ছুটির দিনগুলোতে ফুলটাইম চাকরি করার অনুমতি থাকে। দেশটির স্থানীয় জনগণের মতো বিদেশি শিক্ষার্থীরাও চাকরির সমান অধিকার পান। ২০২৪ সালের হিসেবে জারিকৃত স্বল্পকালীন চাকরির ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টা প্রতি ১৮ দশমিক ৫২ নিউজিল্যান্ড ডলার (১ হাজার ৩৭০ টাকা) সবার জন্য প্রযোজ্য।
এখানে সর্বাপেক্ষা চাহিদাসম্পন্ন পার্ট-টাইম চাকরির মধ্যে কল সেন্টার কর্মী, যেখানে গড় মজুরি ঘণ্টা প্রতি ২১ ডলার (১ হাজার ৫৫৩ টাকা)। শেফ ও খুচরা বিক্রয় প্রতিনিধিদের ২২ ডলার (১ হাজার ৬২৭ টাকা), ওয়েটার বা ওয়েট্রেসরা পান ২৪ দশমিক ৮৮ ডলার (১ হাজার ৮৪০ টাকা)। বারটেন্ডারদের আয় ২৬ ডলার (১ হাজার ৯২৩ টাকা) এবং লাইব্রেরি সহকারীদের ২২ থেকে ২৫ ডলার (১ হাজার ৬২৭ থেকে ১ হাজার ৮৪৯ টাকা)।
এছাড়া স্থানীয় মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের টিউটরিংও উপার্জনের সেরা একটি উপায়। এমনকি এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক ৩০ থেকে ৩৫ ডলারও (২ হাজার ২১৯ থেকে ২ হাজার ৫৮৮ টাকা) আসে।
আরো পড়ুন: পোল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন, পড়াশোনার খরচ, ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
পরিমিত জীবনযাত্রার খরচ
স্কলারশিপ ও পার্ট-টাইম চাকরির পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত জীবনধারণের মাধ্যমে ব্যয়বহুল শহরেও থাকা সম্ভব। যেমন বসবাসের জন্য হল অব রেসিডেন্স নামে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন-ক্যাম্পাসকে গুরুত্ব দেওয়া উত্তম। কেননা এগুলোর ভাড়া যথেষ্ট সাশ্রয়ী। তবে এর জন্য আগে থেকেই সঠিক পন্থায় আবেদন করা জরুরি।
এগুলোতে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ভাড়া নিতে পারে ২১০ থেকে ৫৫৫ ডলার (১৫ হাজার ৫৩০ থেকে ৪১ হাজার ৪৩ টাকা)। হোস্টেলের ভাড়া আরও একটু কম; ১৪০ থেকে ২১০ ডলার (১০ হাজার ৩৫৩ থেকে ১৫ হাজার ৫৩০ টাকা)। সর্বনিম্ন ব্যয়ের উপায় হচ্ছে স্থানীয় পরিবার বা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করে থাকা। এখানে ভাড়া পড়ে গড়ে ১২০ ডলার (৮ হাজার ৮৭৪ টাকা)।
নিত্য দিনের যাতায়াতে বাস বা ট্রেনের মত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে খরচ আরও কমে আসে। দীর্ঘমেয়াদে পরিবহন খরচ বাঁচাতে সাইকেল কেনা উত্তম।
আরো পড়ুন: ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন, পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
শেষাংশ
নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সর্বাপেক্ষা সহায়ক উপায় হচ্ছে স্কলারশিপের সুযোগগুলো কাজে লাগানো। এর মাধ্যমে অধ্যয়নসহ জীবনযাত্রার খরচের সিংহভাগেরই ব্যবস্থা করা সম্ভব। বাকি যা থাকবে তার জন্য অপরিসীম ভূমিকা পালন করবে খণ্ডকালীন চাকরি। স্কলারশিপের মাধ্যমে অধ্যয়নের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ তহবিল অর্জন সম্ভব হলে তা স্টুন্ডেন্ট ভিসা প্রাপ্তিকে আরও সহজ করে তুলবে। তাই একাডেমিক ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি আইইএলটিএস বা টোফেলে যাদের ভালো স্কোর রয়েছে, তাদের জন্য উচ্চশিক্ষার সেরা গন্তব্য নিউজিল্যান্ড।