পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় তার সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে আসা গার্মেন্টস পণ্য এই বন্দর দিয়ে রপ্তানি শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্য নিয়ে পোল্যান্ডের উদ্দেশে বাগেরহাটের মংলা বন্দর ছেড়েছে মার্কস নেসনা নামের একটি বিদেশি জাহাজ।
পানামার পতাকাবাহী জাহাজ মার্কস নেসনা ২৭টি পোশাক কারখানার ১৭টি কনটেইনার নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বন্দর ছেড়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করার পর দক্ষিণবঙ্গের যে সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে তার মধ্যে মোংলা বন্দর অন্যতম। পদ্মা সেতু চালুর সঙ্গে সঙ্গেই মোংলা বন্দর দিয়ে ঢাকার গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ঢাকার ফকির এ্যাপরেলস লিমিটেড, উইন্ডি লিমিটেড, কে সি লিনজেরিয়া লিমিটেড, আর্টিস্টিক ডিজাইন লিমিটেড, নিট কনসার্ন লিমিটেড, মেঘনা নিট কম্পোসিট লিমিটেড, শারমিন এপ্যারেলস লিমিটেডসহ ২৭টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে পানামা পতাকাবাহী জাহাজ ‘মার্কস নেসনা’ মোংলা বন্দরের ৮ নম্বর জেটি থেকে পোল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। ওই জাহাজের কন্টেইনারে বাচ্চাদের পোশাক, জার্সি, কার্ডিগান, টি-শার্ট, ট্রাওজারসহ বিভিন্ন গার্মেন্টস পণ্য রয়েছে।
মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা থেকে মোংলা বন্দরের দুরত্ব এখন ১৭০ কিলোমিটার। আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দুরত্ব ২৬০ কিলোমিটার। মোংলা বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডেলিং দ্রুত ও নিরাপদ হওয়ায় একই সঙ্গে ঢাকার সঙ্গে দুরত্ব কমে যাওয়ায় সময় এবং অর্থ সাশ্রয় হওয়ার কারণে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, বৃহস্পতিবার মোংলা বন্দরের জন্য একটি স্বরণীয় দিন। প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতু হয়ে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির নবযাত্রা শুরু হলো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা থেকে দেশের সব চেয়ে নিকটতম বন্দর হচ্ছে মোংলা। আমদানি-রপ্তানিকারকরা এখন মোংলা বন্দর ব্যবহারে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। যার ফলে ঢাকার গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে একটি জাহাজ বৃহস্পতিবার মোংলা বন্দর থেকে পোল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে। আগামীতে মোংলা বন্দর দিয়ে গার্মেন্টস পণ্য, কন্টেইনার, গাড়ি, জেনারেল কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।
বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন জানান, পদ্মা সেতু চালুর মধ্যে দিয়ে মোংলা বন্দর সব চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। যার সুফল হিসেবে এই প্রথম মোংলা বন্দর দিয়ে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছে। সময় এবং অর্থ ব্যয়ের হিসাব বিবেচনা করে ঢাকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা তাদের গার্মেন্টস পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে রপ্তানি শুরু করেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার মোংলা বন্দরসহ দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ সব চেয়ে বেশি লাভবান হবে।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী এইচ এম দুলাল জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে ঢাকার ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর দিয়ে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে। ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলা বন্দরের দুরত্ব কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দরের দিকে ঝুঁকছে। আগামীতে আমদানি রপ্তানিকারকরা মোংলা বন্দর ব্যবহার করবে বলে তিনি আশাবাদী।
আরও পড়ুন: মোংলা বন্দরে মেট্টোরেলের সপ্তম চালান
মোংলা বন্দরে ১২ বছরে ১৫ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন