পরীমণির পক্ষে প্রতিদিন কেউ না কেউ নিজেকে ঘোষণা করছে। অথচ তার বিরুদ্ধে যে সব চার্জ আনা হয়েছে তা আমাদের সমাজে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। মানে মদ খাওয়া, ড্রাগস নেয়া , ব্ল্যাকমেইল করা, অনৈতিক সম্পর্ক ইত্যাদি। কিন্তু তাতে তার প্রতি সমর্থকদের আগ্রহে একটুও ভাটা পড়েনি। সে অনেকটা ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। দেশে একজন ফিল্মস্টারকে নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা আগে দেখা যায়নি।
সে রাজনীতির বাইরের লোক, পাচ্ছে সামাজিক সমর্থন। যারা তার পক্ষে তারা কম বেশি যাদের বলে সুশীল সমাজ, কলিগ এবং তার ফ্যান। পরীমণিকে কেউ ধোয়া তুলসীপাতা ভাবে? তার সুপার -ফ্যান ছাড়া কেউ ভাবে না। অন্যরা জানে তার জীবন যাপন - যা তার নামে বলা হচ্ছে - তার সবই স্বাভাবিক, সবাই করে। তাতে তারা দোষের কিছু মনে করে না। বিষয় হলো, এই দেশের অনেক ক্ষমতাবান, সম্পদশালী মানুষও তাই করে। নেশা করে, নারী ভোগী, এবং আরও বহু কিছু ভোগ করে। তারা দুর্নীতি করে, ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দেয় না, মানুষের টাকা নিয়ে ভেগে যায় ইত্যাদি। অর্থাৎ বড়লোকদের ওপর রাগের ফিরিস্তি বড়। কিন্তু তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য কাউকে পরোয়া করে না। এদের এক অংশের সাথে বিবাদ হয় পরীমণির এবং সেটা থেকেই সংঘাতের শুরু। বোট ক্লাবের ঘটনার পর পরীমণিকে অনেকে সমর্থন করে, সেই কারণে এবং সে ভেবেছিল, ‘ধর্ষণের’ অভিযোগ তুলে জিতেছে। কিন্তু না, আসলে সে জিতেনি। যদিও অনেকেই বিশ্বাস করে না যে পরীমণিকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। তবুও তার পক্ষে ছিল।
বোট ক্লাব ঘটনা আসলে অতীত হয়ে গেছে। কিন্তু ঢাকার বড়লোকদের প্রতি যে ক্ষোভ, সেটা চলছে। আর ‘এস্টাবলিশমেন্ট’ তার বোট ক্লাবের ঘটনায় অপমানিত, তার এফেক্ট চলছে, যা দেখছি আমরা। তাহলে কী হচ্ছে এসব ? গোটা এপিসোড সুশীল ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে একটা সুযোগ দিয়েছে ‘বোট ক্লাব’ গোষ্ঠী ও ‘রাতের রাজাদের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার। কিন্তু সাধারণ মানুষ তার সিনেমার ভক্ত হতে পারে, তার জীবন-যাপনের নয়। তাই তারা এতে নেই। মানববন্ধন যারা করছে তারাই শুধু মাঠে, অর্থাৎ মধ্যবিত্ত যাদের ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি। তারা পরিমণির বিষয় নিয়ে যতটা ভাবিত, ততটাই বর্তমান ব্যবস্থা নিয়েও। কিন্তু যারা সরব তারা সব সময় সরব হয়। কিন্তু এর বেশি কিছু করতে পারে না। তারা সংখ্যায় বেশি নয়। পরীমণিকে নিয়ে রিমান্ড চর্চা চলছে। যে শক্তির বিরুদ্ধে পরীমণি গেছে তাতে তার পরিণতি এমনটিই হওয়ার কথা। কিন্তু পুলিশের আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। তারা ‘রাতের রানিদের’ পিছনে গেলো ঠিকই। কিন্তু ‘রাতের রাজাদের কিছু না বলে নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বাড়িতে মদ, ট্যাবলেট পাওয়া, পার্টিতে যা খুশি করা , এটা তো ঢাকায় কমন। ইদানীং কেউ কিছু মনে করে না। রাজা ও রানিদের জীবন একই কিসিমের। আদালত পাড়ায় বার বার রিমান্ড নিয়ে, মানুষের মনে পরীর জন্য ‘আহা বেচারি’ ভাব সব চেয়ে বেশি সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে পুলিশ বিভিন্ন মামলা খারিজ ও নিষ্পত্তি করছে, সেখানে তাকে ভিলেন বানিয়ে কী পাওয়া গেলো ? শেষ কথা পরীমণি ও তার মতো যারা প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিপদে আছে, তাদের সবাইকে সংবাদটা দেয়া হয়ে গেছে যে ‘হুঁশিয়ার-কার গায়ে হাত দাও?’ এবার মিটমাট করে ছেড়ে দিন। কয়েকটায় তো হলো দেখলাম, এটি কেন হবে না ?
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি