বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের মধ্যে বাংলাদেশ ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদলীয় এই নেতা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কার মতো একই পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে। তাই তারা সরকারকে ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্পগুলো বাদ দেয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বুলেট ট্রেন, দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পূর্বাচলে ১১০ তলা বঙ্গবন্ধু বহুতল ভবন কমপ্লেক্স, শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, নোয়াখালী বিমানবন্দর, দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প এবং রাজধানী ঢাকার বাইরে স্থানান্তরের মতো প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ এবং পদ্মা সেতু হয়ে পায়রা বন্দর এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার এবং দোহাজারী হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণসহ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা ইতোমধ্যে এই প্রকল্পগুলোকে ব্যয়বহুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যা কেবলমাত্র সরকারি ঋণের বোঝা বাড়াবে।
আরও পড়ুন: নতুন ফসল উঠলেও ভুল নীতির কারণে চালের দাম বাড়ছে: বিএনপি
সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ফখরুল বলেন, ‘আমার মনে হয় বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা আশঙ্কা করছি, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশও শ্রীলঙ্কার মতো বিপদে পড়তে পারে। আমাদের আশঙ্কাকে বাস্তবসম্মত বলা যায়।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাপকভাবে লুণ্ঠন করে অর্থ উপার্জন করা। ‘অর্থনীতি তখনই চাঙ্গা হবে, যখন জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই বিএনপি নেতা বলেন, বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে তাদের দলের ঐক্য প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। ‘আপনারা আমাদের আন্দোলন পরিকল্পনাসহ সবকিছু জানতে পারবেন, আমরা প্রকাশ্যে ঐক্য প্রক্রিয়ার ঘোষণা নিয়ে আসব।’
ফখরুল বলেন, তাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ‘দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি গত ১৩-১৪ বছরের তুলনায় এখন সবচেয়ে বেশি চাপের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি হ্রাস এবং রেমিট্যান্স হ্রাসের কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে দ্রব্যমূল্য অসহনীয় হয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত আট মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নেমে এসেছে। আগামী দুই মাসে এটি আরও ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং রেমিট্যান্সের মাধ্যমে সেই শূন্যতা পূরণ না হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ খুব শিগগিরিই শেষ হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন: তীব্র সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ: বিএনপি