বিএনপির সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে আগামী দিনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং আন্দোলন সফল করতে দলের নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
শনিবার রাজধানীর এক সমাবেশে বক্তৃতায় তিনি জনগণের ওপর গুলি না চালাতে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দেন।
এই স্বৈরাচারী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনে অংশ নিতে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান এই বিএনপি নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ বলেন, ‘দুঃশাসন’, লুণ্ঠন ও দমন-পীড়নে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, দেশের জনগণ বর্তমান সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
'মিথ্যা মামলায়' দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ তাদের ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য দলটির দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর কমলাপুর এলাকার পীর জঙ্গী মাজার সড়কে সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ সিটি শাখা।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে 'গায়েবি' মামলা দায়ের, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ঘন ঘন বিদ্যুত বিপর্যয় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের 'সবক্ষেত্রে' দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলের প্রতিবাদ হিসেবে আরও ২০টি নগর ও জেলায শহরে সমাবেশ করেছে বিএনপি।
শুক্রবার খুলনায় এবং শনিবার লালমনিরহাট, রাজবাড়ী ও পটুয়াখালীতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ হামলা ও গুলি চালায় বলে অভিযোগ করেন মোশাররফ।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা প্রশাসন এবং বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে মনে করিয়ে দিতে চাই তারা প্রজাতন্ত্রের সেবক…আপনাদের জনগণের সেবা করার কথা। কিন্তু আপনারা এখন দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গুলি চালাচ্ছেন।’
তিনি জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বেআইনি নির্দেশ পালন না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: দাবি একটাই, শেখ হাসিনার পদত্যাগ: মির্জা ফখরুল
মোশাররফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না থাকলে আপনাদের অনেকের (আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) অনেক সমস্যায় পড়ার আশংকা আছে। তাই আমরা বলছি আপনারা এখনই নিজেদের সংশোধন করুন। আপনারা এখন থেকে জনগণের পক্ষে দাঁড়ান। ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে তারা ক্ষমা করবে না।’
তিনি বলেন, যারা জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের ওপর গুলি চালাবে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবে, দেশের জনগণ ও তাদের সরকার তাদের ক্ষমা করবে না।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় বসতে গণতন্ত্রকে বিলুপ্ত করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, সরকার ব্যাপক লুটপাট ও দুর্নীতি করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ‘আওয়ামী লীগ তাদের ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে দেশবাসীকে চরম সমস্যায় ফেলেছে।’
মোশাররফ বলেন, সরকার রাজনীতিকরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে বলে দেশে আইনের শাসন নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ অর্থনীতি ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, তারা তা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। ‘তাই মানুষ এখন এই সরকারের পতন দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ‘যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে নিজেদের পকেট ভারী করেছে তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’
তিনি বলেন, অতীতের মতো বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে উচ্ছেদ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা বিএনপির দায়িত্ব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা হামলা করলে তাদের দলও পাল্টা হামলা করবে।
তিনি ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির এই নেতা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন ও তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিন্দা করেন।
তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘যারা মানুষের ওপর গুলি চালাচ্ছে তাদের মনে রাখতে হবে যে সবসময় আপনার ইউনিফর্ম থাকবে না। যারা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও হত্যা করছে, তাদের রেহাই দেওয়া হবে না।’
আরও পড়ুন: 'আপনার সময় শেষ': সরকারের প্রতি ফখরুল
রাষ্ট্রদূতদের ‘অতিরিক্ত পুলিশ এসকর্ট’ প্রত্যাহার সরকারের ‘চরম দায়িত্বহীনতা’: ফখরুল