ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহত নূরে আলম ও আবদুর রহিম হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার শপথ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের সকলকে চোখের জল ফেলা বন্ধ করে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতিকে বাঁচাতে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন,‘আর কান্নাকাটি নয়, আমাদের এখনই কান্না ভুলে জেগে উঠতে হবে, কারণ এই ভয়ঙ্কর স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের নিপীড়ন থেকে জাতিকে বাঁচাতে হবে।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভোলা জেলা শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলমের নামাজে জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ফখরুল এ মন্তব্য করেন।
রবিবার ভোলায় পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ নূরে আলম বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান, তার মৃত্যুতে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দুজন হয়েছে। এর আগে রবিবার ভোলায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিম নিহত হন।
ফখরুল বলেন, তাদের দলের নেতাকর্মীদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে এবং তাদের (বিএনপির নেতাকর্মীদের) বিরুদ্ধে দায়ের করা ৩৫ লাখ মামলা থেকে মুক্তির জন্য শোককে শক্তিতে পরিণত করে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যমত্যে বিএনপি-গণফোরাম
তিনি বলেন, তাদের দল বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সমগ্র জাতিকে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করে শান্তিপূর্ণভাবে শক্তিশালী আন্দোলন করবে। ‘আমরা আমাদের ছেলেদের, আমাদের ভাই নূরে আলম ও আবদুর রহিমকে হত্যার প্রতিশোধ নেব গণআন্দোলনের মাধ্যমে।’
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বিএনপি নেতা বলেন, বাবার কাঁধে ছেলের লাশ বহন করার চেয়ে বড় কষ্ট আর কিছু নেই।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের সামনে আমাদের ছেলে ভোলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলমের লাশ দেখছি। যিনি এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। আমাদের ভোলা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিমকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং আরও ১৯ জন ঢাকা ও বরিশালের হাসপাতালে বাঁচার জন্য লড়াই করছে।’
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের হাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা নতুন কিছু নয়। ‘আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে আমাদের এক হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে এবং প্রায় ৬০০ জনকে গুম করেছে স্বৈরাচারী শাসনকে মজবুত করার জন্য।’
সকাল ১১টায় নিহত ছাত্রদলের সভাপতি জানাজা হওয়ার কথা থাকায় সকাল থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মীদের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিতে থাকে। সেসময় ব্যস্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে নূরে আলমের মরদেহ নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে মরদেহ আসার পর অনেক ছাত্রদল নেতাকর্মীকে কাঁদতে দেখা যায়।
ফখরুল দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নূরে আলমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এবং দলীয় পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
পরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে তার নামাজের জানাজা শেষে লাশ দাফনের জন্য ভোলায় পাঠানো হয়।
বিদ্যুৎ খাতে চলমান লোডশেডিং ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে বিএনপি’র দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত রবিবার ভোলায় তাদের জেলা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা।
একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কালীনাথ রায়ের বাজারে বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
পরে পুলিশ গুলি ছুড়ে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম নিহত এবং নূরে আলমসহ দল ও এর সহযোগী সংগঠনের আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়।
তিন দিনের শোক
নূরে আলম ও আবদুর রহিমের স্মরণে শুক্রবার থেকে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, শোক পালনকালে সারাদেশে বিএনপির সকল কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। নিহত দুই নেতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
এছাড়া তাদের হত্যার প্রতিবাদে আগামী ৬, ৭ ও ৮ আগস্ট যথাক্রমে ছাত্রদল,কৃষকদল ও যুবদল সমাবেশ করবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: লোডশেডিংয়ের পেছনে সরকারের ‘মেগা’ দুর্নীতি, লুটপাট: বিএনপি