পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল নয়, রাজনৈতিক আন্দোলন। আওয়ামী লীগ সরকারকে ২০ বছর গায়ের জোরে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। কিন্তু এখন আর আমাদের সাথে লড়াই করা সহজ হবে না। কারণ আমাদের শিকড় অনেক গভীরে রয়েছে।
সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের মসৃণ এবং টেকসই উত্তরণের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা তৈরির সুবিধার্থে সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, বেসরকারি খাত, এনজিও, নাগরিক সমাজ ও শিক্ষাবিদদের সাথে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত একটি জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সিজিএস এর চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী, গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহ-আল-মামুন এবং নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
‘এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং কার্যকর উন্নয়ন সহযোগিতা’ শিরোনামের এই অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের রেসিডেন্ট প্রতিনিধি ভ্যান গুয়েন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)- এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)- এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন ও নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. জোনায়েদ শফিক।
আরও পড়ুন: গণঅনশনে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বিএনপির সমালোচনা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
‘স্বল্পোন্নত দেশ বলার পরিবর্তে, আমাদের সবচেয়ে শোষিত দেশ বলা উচিত ছিল’ এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংলাপের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরেন, কীভাবে জাতি বিদ্যুতের অভাব এবং অনাহারে কাটিয়ে উঠে এলডিসিতে পরিণত হয়েছে তা উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশে আয় বৈষম্য থাকলেও বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই যেখানে বৈষম্য নেই।
তিনি বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে দুর্নীতি ছিল, কিন্তু সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতিকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক দিকে যেতে দেখলেও বাংলাদেশ এখনও ইতিবাচক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে।
প্রথমে কী আসে, উন্নয়ন বা সুশাসন- এ আলোচনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সুশাসনের গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রয়োজন।
আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের অর্জন। এশিয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশ সামাজিক সূচকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। এ যাত্রাপথে বাংলাদেশ যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সেসব সমস্যা যেকোনো দেশেই হতে পারে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা নিতে হবে। ৫০ বছর আগে যেখানে দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল সমপরিমাণের, সেখানে ৫০ বছর পর এসে দক্ষিণ কোরিয়ার মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশি। তিনি গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের তুলনা করতে গিয়ে বলেন গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন একে অপরের বিকল্প হতে পারে না, আমাদের উভয়েরই প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা আর নেই
জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, এলডিসি এর বিষয়টি এখনও শুধু নীতি-নির্ধারক পর্যায়েই রয়ে গিয়েছে। কিন্তু সফলতা পেতে হলে সরকারের জনগণকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, উন্নীত হওয়ার পর আমাদের কী করণীয় হবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নটা কি টেকসই হবে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একই সাথে উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশ্বে তাদের অবস্থান সমুন্নত করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন উন্নত দেশগুলোর সাথে আলোচনা করা। বেসরকারি খাতের দিকেও নজর দেয়ার কথা বলেন তিনি।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন সময় এসেছে বাংলাদশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। যদিও বাংলাদেশ বাড়তি সময় চাচ্ছে, তবুও দেশের কথা চিন্তা করে, দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের উচিৎ হবে না বাড়তি সুবিধাটুকু নেয়ার। যদি কোরিয়া, ভিয়েতনাম পারে, তবে বাংলাদেশও পারবে।
অধ্যাপক ডা. জোনায়েদ শফিক বলেন, আমাদের দেশের ওষুধ শিল্পের প্রযুক্তি আছে, লোকবল আছে এবং কোনো কিছু আমাদের থামাতে পারবে না। এলডিসির সাথে সাথে বাংলাদেশও এগিয়ে যাবে। এখন শুধু প্রয়োজন সরকারের সহযোগিতা।
ভ্যান গুয়েন বলেন, আমাদের সবাইকে একত্রে নিয়ে কাজ করতে হবে। পরিবর্তনের ধারা বজায় রাখতে হবে। ইউএনডিপি সব সময় বাংলাদেশের এই পথচলায় সাথে থাকবে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল বাধার সম্মুখীন হবে না: প্রধানমন্ত্রী