একদফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবার রাজধানীর দয়াগঞ্জ ও গুলশান এলাকায় পৃথক দুটি মিছিল করেছে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ এক দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্যই এই কর্মসূচি পালন করছে দলটি।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দয়াগঞ্জে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর শাখার মিছিলের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
কর্মসূচি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি নেতা চলমান আন্দোলন দমন করতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর নিপীড়ন চালানোর জন্য সরকারের সমালোচনা করেন। তিরি বলেন, ‘গোটা দেশ দৃশ্যত জেলখানায় পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা আমাদের অনেক নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ অর্জনকারী নয়জন পুলিশ কর্মকর্তা এখন সেখানে যেতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে আরও নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানাচ্ছে।
একটি নিরপেক্ষ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে মর্যাদার সঙ্গে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান ফখরুল।
পাশাপাশি তিনি অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কোনো শর্ত ছাড়াই মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
আরও পড়ুন: সব মহানগরে গণমিছিল করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো
বিএনপির এ নেতা বলেন, সরকার জনগণের টাকা চুরি করে আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে।
এদিকে বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর গুলশান এলাকায় ডিসিসি মার্কার কাছে ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির মিছিলের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
সমাবেশে বক্তৃতায় আব্বাস বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য বিরোধীদের দমন করতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে।
বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধ করতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান বিএনপি নেতা।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতেও তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি নেতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কারাগার থেকে তার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তারা তীব্র আন্দোলন করবেন।
পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। এ মিছিল মহাখালী বাসস্টেশনে গিয়ে শেষ হবে।
দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্রতিকৃতি নিয়ে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী দুই মিছিলে যোগ দেন।
বিএনপি ছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট, গণতান্ত্রিক বম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), এনডিএম, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গণঅধিকার পরিষদের দুই পক্ষ পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছে।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর লক্ষ্য নিয়ে বিরোধী দলের এক দফা আন্দোলনের এটি চতুর্থ কর্মসূচি।
গত ১২ জুলাই বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দাবি আদায়ে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়।
তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে বর্তমান “ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী, জনগণের ভোট লুটেরা ও অবৈধ” আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, বিদ্যমান সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক রাজবন্দীর মুক্তি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব ‘মিথ্যা ও সাজানো’ মামলা প্রত্যাহার এবং সব ‘মিথ্যা সাজা’ বাতিল করা।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে গত বছরের ডিসেম্বরে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোট একযোগে আন্দোলন শুরু করে।
আরও পড়ুন: স্বৈরাচারী এ সরকারের আমলে কেউই নিরাপদ নয়: রিজভী
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনের চেষ্টা করবেন না: মির্জা ফখরুল