১৫ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন নিয়ে জারি করা রুল এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট শাকিলা রওশন ও অ্যাডভোকেট সাগুফতা আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
এর আগে সকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন সংক্রান্ত সকল নথি হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি বলেন, খালেদা জিয়া বিভিন্ন তারিখে বিভিন্ন সময়ে জন্মদিন পালন করেছেন। তার জন্মদিন সংক্রান্ত পাসপোর্ট অফিস, নির্বাচন কমিশন, ম্যারিজ সার্টিফিকেট, এভারকেয়ার হাসপাতালের ভর্তির ফরম, মেট্রিকুলেশনের সার্টিফিকেটের তথ্য আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আগামীকাল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় থাকবে।
গত ৩১ মে যুবলীগ নেতা মামুনুর রশিদ ১৫ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি করে গত ১৩ জুন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জন্মদিনের বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে কী কী তথ্য আছে তা জানতে চান হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জন্ম নিবন্ধন, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, পাসপোর্টসহ জন্ম তারিখ সংক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কাছে থাকা সব নথিপত্র তলব করেন আদালত।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার প্রতি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা রয়েছে: ফখরুল
দুই মাসের (৬০ কার্যদিবস) মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদেরকে এসব নথিপত্র দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে জাতীয় শোক দিবসকে অবমূল্যায়ন ও ক্ষুন্ন করতে ১৫ আগস্টসহ বিভিন্ন দিনে জন্মদিন পালন করায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য সচিব, পুলিশের আইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রিটের শুনানিতে নাহিদ সুলতানা যুথী আদালতে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন পালন করছেন বেশকিছুদিন ধরেই। অথচ আমরা নথিপত্র থেকে দেখতে পাচ্ছি, তার একাধিক জন্ম তারিখ। তার এসএসসির নম্বরপত্রে জন্মতারিখ ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬। কাবিননামায় জন্মতারিখ লেখা রয়েছে ৯ আগস্ট, ১৯৪৪। ২০০১ সালে নেয়া পাসপোর্টে জন্মতারিখ ৫ আগস্ট, ১৯৪৬। চলতি বছরের মে মাসে তার করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে জন্মতারিখ লেখা আছে ৮ মে, ১৯৪৬। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের দিন জাতীয় শোক দিবসেও জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। এটা করা হচ্ছে জাতীয় শোক দিবসকে অবমূল্যায়ন করতে।
তিনি বলেন, একজন মানুষের কয়টি জন্মদিন থাকতে পারে? তিনি(খালেদা জিয়া) একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তারতো এভাবে একাধিক জন্মদিন পালন করার কথা নয়।
এসময় আদালত বলেন, আমার যতটুকু মনে পড়ে, এই ঘটনায় একটি সিভিল মামলা হয়েছিল। বিচারপতি মোমতাজউদ্দিন হয়তো কোনো আদেশ দিয়েছিলেন। হয়তো সেই সিভিল মামলাটি বিচারাধীন। তাই একই ঘটনায় রিট আবেদন করার সুযোগ আছে কীনা? জবাবে নাহিদ সুলতানা যুথী বলেন, অবশ্যই সুযোগ আছে। কারণ এরসঙ্গে জনস্বার্থ জড়িত। সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী একাধিক জন্মদিন পালন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন। বহির্বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, সিভিল মামলায় রুল বিচারাধীন থাকলেও আদালত একটি রুল দিয়ে বিস্তারিত শুনতে পারেন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত: আইনমন্ত্রী
এসময় আদালত বলেন, এটা নিয়ে মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্টরা কি উদাসীন? তারা কেন নিষ্ক্রিয়? সরকার যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয় তবে আদালতের করার কি আছে? এসময় আরেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার বলেন, প্রকৃত জন্ম তারিখে তা পালন করুক। কিন্তু তারতো জন্ম তারিখ একাধিক। এসএসসি, বিবাহ নিবন্ধন, পাসপোর্টে একাধিক জন্ম তারিখ উল্লেখ আছে। সর্বশেষ করোনা সনদে আরেকটি তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, একেক দিন জন্মদিন পালন করায় বিশাল জনগোষ্ঠী সংক্ষুব্ধ।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার প্রতি অনেক উদারতা দেখিয়েছি: শেখ হাসিনা