বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় শনিবার আটকের সময় পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
রবিবার (৩০ জুলাই) নয়াপল্টন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ডিবি কার্যালয়ে তার দুপুরের খাবারের ভিডিও ও ছবি জনগণকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়েছে।
গয়েশ্বর বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনার ভিডিও এবং ছবি ছড়িয়ে দেওয়া একটি নিম্ন রুচির পরিচায়ক এবং একটি অত্যন্ত লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য কাজ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও জানান, সোনারগাঁও হোটেল থেকে ডিবি অফিসের আনা খাবার খান নি তিনি; তার পরিবর্তে ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশিদের বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খান তিনি।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘যারা এটা করেছে (ভিডিও ও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে) তারা তাদের নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছে। এটি এক ধরনের তামাশাপূর্ণ নাটক এবং আমি জানি না কে এর স্ক্রিপ্ট লিখেছেন।’
আরও পড়ুন: আটকের পর ডিবি প্রধানের সঙ্গে গয়েশ্বরের দুপুরের ভোজ
শনিবার ডিবি অফিসের প্রধান হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে গয়েশ্বর দুপুরের খাবার খাচ্ছেন এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় ধোলাইখাল থেকে ওই বিএনপি নেতাকে আটক করা হয়। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গয়েশ্বর বলেন, রক্তচাপ কমে যাওয়ায় ডিবি কর্মকর্তারা তাকে খেতে অনুরোধ করেন।
প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘তারা বলল, স্যার আপনি সারাদিন কিছু খাননি। আমরা শুনেছি আপনি পানিও পান করেননি। আপনাকে স্যালাইন দিয়ে ইনজেকশন দেওয়া হবে। কিছু না খেয়ে স্যালাইন নেবেন? আমাদের যা আছে তা একটু খান। আমরা আপনাকে না খাইয়ে রাখতে পারি না। কারণ আমরা আপনাকে গ্রেপ্তার না করলেও আমাদের দায়িত্ব রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাইনিং রুমে ঢুকে দেখলাম খাবারের বিশাল আয়োজন…আমি বললাম সোনারগাঁও বা অন্য কোন হোটেলের খাবার আমি খাই না। আমি ৯০ভাগ নিরামিষাশী এবং আমি এক বা দুটি আইটেমের বেশি খাই না। আমি দেখেছি যে তারা ছবি তুলছে এবং আমি তাদের বলেছিলাম যে খাবারের সময় ছবি তোলা কোনও ভদ্রলোকের কাজ নয়।’
পরে তিনি বলেন, ডিবি প্রধান তার (হারুনের) বাড়ি থেকে আনা খাবার নিয়ে আসতে বলেছেন তার কর্মীদের।
আরও পড়ুন: নিরাপত্তাহীনতায় বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক ক্রমান্বয়ে দেশ ছাড়ছে: গয়েশ্বর
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (হারুন) টিফিন ক্যারিয়ার থেকে আমাকে দুই চামচ সাদা ভাত দিয়েছিলেন। আমি তাকে শুধু তার সবজি দিতে বললাম। তারপর তিনি বললেন, স্যার এক টুকরো রুই মাছ নিন, এটা কিশোরগঞ্জ থেকে আনা হয়েছে।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, এর আগেও অনেকবার ডিবি অফিসে গিয়েয়েন তিনি। সেসময় আশেপাশের হোটেল থেকে খাবার দিয়ে তাকে আপ্যায়ন করা হত। কিন্তু সোনারগাঁ থেকে এবার খাবার কেনার তহবিল দিল কে? তাদের কি এটা করার নিয়ম আছে? যাদের তারা হেফাজতে নেয় তারা কি তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করে? তাই বোঝা যায়, তারা লোক দেখানো নাটক মঞ্চস্থ করেছে। এটি একটি নিম্ন রুচির পরিচয়। বাংলাদেশের মানুষ এতটা বোকা নয় যে সাজানো ছবি ও ভিডিও দেখে বিপথগামী হবে।
গয়েশ্বর বলেন, গয়েশ্বর রায়ের মাথা কেনার মতো এত টাকা রাষ্ট্রের নেই। ‘রাষ্ট্রের ক্ষমতা আছে আমাকে এক গুলিতে মেরে ফেলার এবং ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের মতো আমাকে গুম করার ক্ষমতা আছে... কিন্তু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মতো একজনকে কেনার ক্ষমতা সরকারের নেই।’
রাজধানীর ধোলাইখালে দলটির অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে শনিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গয়েশ্বরকে পিটিয়ে আহত করে।
পরে মাথা কেটে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে আটক করে প্রথমে ওয়ারী থানায় ও পরে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: মানুষের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই বিএনপির দায়িত্ব: গয়েশ্বর
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন। তারপরে তাকে তার কার্যালয়ের সামনে নামিয়ে দেওয়া হয়।
তার ওপর হামলার বর্ণনা দিয়ে গয়েশ্বর বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা ধোলাইখালে রাজধানীর প্রবেশপথে তাদের দলের অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে জড়ো হলে পুলিশ তাদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে, যার ফলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
তিনি বলেন, ‘আপনারা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছেন যে কীভাবে তারা আমাদের নেতাকর্মীদের লাঠি দিয়ে পিটিয়েছিল... তারা আমাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে আমি মাটিতে পড়ে যাই এবং তারপরও তারা আমাকে মারধর করে। দেখে মনে হচ্ছে তারা একটি সাপকে মারছে।’
এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে তার কার্যালয়ে গয়েশ্বরকে দেখতে যান এবং তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন।