রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির জন্য ঢাকার দুই সিটি মেয়রের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন বিএনপি নেতা তাবিথ আওয়ান ও ইশরাক হোসেন।
এ ছাড়া ব্যর্থতার দায় নিয়ে দুই মেয়রের পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা।
এদিকে মেয়রদের চরম ব্যর্থতাকে দায়ী করে ডেঙ্গু রোগীদের পাশে দাঁড়াতে এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
শুক্রবার (২১ জুলাই) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীর ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতির কারণ তুলে ধরে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির অংশ হিসাবে তারা বলেন, তারা রক্ত সংগ্রহ অভিযান শুরু করবেন। দলের লোকদের রক্তদানে উৎসাহিত করবেন এবং অন্যদেরও এটি করতে উৎসাহিত করবেন।
আরও পড়ুন: বিএনপির সঙ্গে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
যতদিন ডেঙ্গু পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে দলটি গ্রহীতা ও দাতাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি অনলাইন ‘ব্লাড ইনফরমেশন ডিপোজিটরি’ ওয়েবসাইটও চালু করবে এবং এর পরিষেবা অব্যাহত থাকবে।
এ ছাড়া ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পেতে এডিস লার্ভা নির্মূলে ওয়ার্ড পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার লাগানোর মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালাবে দলটি।
বিএনপি জনগণের সঙ্গে একত্রে এডিস মশার প্রজনন চিহ্নিত করে পরিষ্কার করার পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে।
তাবিথ বলেন, এক্ষেত্রে, আমরা অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি সরাসরি জনসচেতনতার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম পরিচালনা করব।
তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অব্যাহত অবহেলায় মৌসুমি ডেঙ্গু এখন সারা বছরের আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
২০১০-২০১১ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ছিল, কিন্তু গত কয়েক বছরের অব্যবস্থাপনা এবং অবহেলার কারণে এটি এখন ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, শহরটি এডিস মশার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। নগরবাসী এখন মশার কামড়ে মৃত্যুর ক্রমাগত ভয়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, নগর কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল একটি সমন্বিত, কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। কিন্তু জনগণের নির্বাচিত কোনো প্রতিনিধি না থাকায় আমরা ঢাকায় তেমন কিছু দেখিনি। ফলে ২০২৩ সালেও ঢাকার মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, বর্ষাকালে বর্তমান হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ডেঙ্গু খুব দ্রুত মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। বর্তমান অবৈধ সিটি করপোরেশন অবহেলা ও দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের যুব সমাজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকেও দায়ী করতে হবে।
তাবিথ বলেন, নগর কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে নাগরিকদের জরিমানা করার কথা বলছে। এই অনির্বাচিত মেয়রদের বক্তব্য পরস্পর বিরোধী। মশা নিয়ন্ত্রণে নিজেদের অসাবধানতা, ব্যর্থতা, দুর্নীতি আড়াল করার জন্য নাগরিকদের দায়ী করা হচ্ছে। আমরা এই প্রচেষ্টার নিন্দা জানাই।
তিনি বলেন, অকার্যকর ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে যথেচ্ছভাবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অবৈজ্ঞানিকভাবে চলছে।
এমনকি এই ওষুধগুলো কেনার ক্ষেত্রেও অসামঞ্জস্য ছিল, কারণ তারা তাদের কার্যকারিতা পরীক্ষা না করেই জনগণের অর্থ ব্যয় করেছে।
স্প্রে করার ক্ষেত্রে প্রচণ্ড অব্যবস্থাপনা, অপ্রশিক্ষিত শ্রমিকদের নিয়ে শো-অফের কর্মসূচিও রয়েছে।
তাবিথ বলেন, তবে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কর্মী হিসেবে আমরা মনে করি, সবসময় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য।
তাবিথ ও ইশরাক উভয়েই ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রের পদত্যাগ দাবি করেন।
ইশরাক বলেন, ঢাকার দুই সিটির মেয়রের ব্যর্থতায় রাজধানীতে ডেঙ্গু মহামারি ও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জনগণের কাছে জবাবদিহির অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, দূষণ রোধে এবং কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরিতে সামগ্রিক ব্যর্থতা ডেঙ্গু পরিস্থিতি বর্তমান পর্যায়ে অবনতির অন্যতম কারণ।
স্থির পানিতে এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করে উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, অপর্যাপ্ত বর্জ্য নিষ্কাশনের কারণে স্থির পানিতে এডিস মশা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামতকে উপেক্ষা করে দুই মেয়র এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ঠেকাতে যথেচ্ছ কিছু কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ইশরাক অভিযোগ করেন যে, দুই সিটি করপোরেশনের মেয়ররা শহরের আকার এবং জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যাপ্ত কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আরও পড়ুন: এক দফা আন্দোলন ঠেকাতে লক্ষ্মীপুরে সজীব হত্যা: বিএনপি
ভোট চুরির পরিকল্পনা আছে আ. লীগের: ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে বিএনপি