বিরোধী দলের এক দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ১৮ অক্টোবর ঢাকায় গণসমাবেশসহ ছয় দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
৭ অক্টোবর কর্মসূচি শুরু হবে এবং ১৮ অক্টোবর ঢাকায় জনসভার মাধ্যমে শেষ হবে। সামনের দিনগুলোতে বিএনপির কর্মসূচিতে সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জল্পনা-কল্পনা চলছে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়িতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে দলের রোডমার্চ কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘোষণা দেন।
ফখরুল বলেন, তারা আর রোডমার্চ করবেন না কারণ আগামী দিনে তারা কেবল ঢাকায় সব কর্মসূচি পালন করবেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে জিততে ভোট চুরিই শেখ হাসিনার একমাত্র ভরসা: আমির খসরু
তিনি বলেন, দুর্গাপূজার সময় তারা কোনো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবের পর তারা আরও কঠোর কর্মসূচি দেবেন।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে অন্য বিরোধী দলগুলোও একই সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করবে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৭ অক্টোবর ঢাকায় শিক্ষক সমাবেশ, ৯ অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ, ১২ অক্টোবর ঢাকায় ছাত্র সম্মেলন, ১৪ অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশে গণঅনশন কর্মসূচি, ১৬ অক্টোবর ঢাকায় যুব সমাবেশ এবং ১৮ অক্টোবর ঢাকায় গণসমাবেশ।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তাদের দল তাদের এক দফা দাবি মেনে নিতে ঢাকার সমাবেশ থেকে সরকারকে আল্টিমেটাম দিতে পারে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘গোপন’ সম্পর্ক নিয়ে কাদেরের দাবি উড়িয়ে দিল বিএনপি
সময়সীমার মধ্যে সরকার দাবি না মানলে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা ঘেরাও, অবরোধ-হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেবে দলটি।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কালাকচুয়া খন্দকার ফুড গ্যালারি মাঠে চট্টগ্রাম অভিমুখে বিএনপির রোডমার্চের উদ্বোধন করেন ফখরুল। রোডমার্চটি ফেনী ও মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে শেষ হয়।
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ দলের এক দফা দাবিতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রোডমার্চ শুরু করে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র থেকে খালি হাতে দেশে ফিরেছেন।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমেরিকা থেকে খালি হাতে ফিরেছেন। তিনি ভিসা নীতি বাতিল করতে এবং নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেতে অনেক প্রচেষ্টা করেছিলেন। তারা (মার্কিন) এতে কর্ণপাত করেনি।’
এমতাবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্যভাবে অনুষ্ঠানের পথ সুগম করতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র থেকে খালি হাতে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী: ফখরুল
বিএনপি নেতা অভিযোগ করে বলেন, সরকার ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে জোর করে আরেকটি একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে, কিন্তু জনগণ তা হতে দেবে না। ‘আমরা এবার আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই। আপনাদের আর ভোট চুরি করতে দেওয়া হবে না।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, স্বেচ্ছায় ক্ষমতা না ছাড়লে চলমান রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত করবে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘জনগণ জানে কিভাবে একটি স্বৈরাচারী ও দখলদার সরকারকে অপসারণ করতে হয়। সেজন্য মানুষ এখন রাস্তায় নেমেছে।’
তিনি বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথ দখলের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান।
দলীয় নেতা-কর্মীদের ফখরুল বলেন, ‘আমরা যদি ভবিষ্যতে বাঁচতে চাই এবং দেশকে রক্ষা করতে চাই, তাহলে বর্তমান সরকারকে সরিয়ে গণমুখী সরকার প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।’ ‘আমাদের আর সময় নষ্ট না করে জেগে উঠতে হবে। আমাদের রাজপথ দখল করতে হবে। আসুন সরকার পতনের আন্দোলন আরও জোরদার করি।’
তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না সরকার।
আরও পড়ুন: আ. লীগ ছাড়া বাকি সবাই এ সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে: ফখরুল