বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, তাদের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিতে সরকার নতুন নাটকের চিত্রনাট্য তৈরি করছে।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা অনেক ঘটনা, অনেক উত্থান-পতন এবং দমনমূলক কর্মকাণ্ড, প্রাণহানি, জোরপূর্বক গুম, খুন এবং মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলা দেখেছি। আমরা এখন দেখছি যে তারা (আওয়ামীলীগ) অগ্নিসংযোগ সহিংসতার কথা বলছে। আদালত চত্বর থেকে জঙ্গিদের ছিনতাইয়ের একটি নতুন নাটকও দেখেছি।’
এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা আরও বলেন, সরকার ‘অশুভ’ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন নাটকের চিত্রনাট্য লিখছে। জনগণের মূল দাবি নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ঐক্যের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: শেরপুরে বিএনপির ১৫ নেতাকর্মী কারাগারে
ফখরুল বলেন, সরকার বিরোধী দলকে দমন করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কাল্পনিক মামলা দায়েরের পুরনো খেলায় লিপ্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপির ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও সেখানে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেনি কেউ। বিস্ফোরণের শব্দ না হওয়ায় প্রত্যক্ষদর্শীরাও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ইতোমধ্যেই বিএনপির সঙ্গে জড়িত সাড়ে চার হাজার শনাক্ত ও ১০ হাজার অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে ৯৬টি মামলা হয়েছে। ‘এর মানে তাদের পুরোনো খেলা শুরু হয়েছে। তারা ঘটনাগুলো ঘটাবে এবং আমরা মামলার মুখোমুখি হব এবং এভাবে আমরা আদালতে যেতে ব্যস্ত থাকব এবং তারা তাদের কাজ সেরে ফেলবে।’
ভোট কারচুপির নতুন কৌশল
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের সময় এলে ক্ষমতাসীন দলগুলো কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার নতুন কৌশল উদ্ভাবন করে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় শক্তিশালী আন্দোলন। ‘এই শাসন অপসারণের একমাত্র উপায় হল জনগণের ঐক্য গড়ে তোলা এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আন্দোলন চালানো ।‘
‘সেই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংসদ ও নতুন সরকার গঠিত হবে এবং এভাবে জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি হবে,’ ফখরুল আশা প্রকাশ করেন।
বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। ‘আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে।’
তিনি আওয়ামী লীগ শাসনের পতন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে
ফখরুল বলেন, পুলিশ, সিভিলসহ সব প্রশাসন ক্ষমতাসীনদের তোষামোদ করতে ব্যস্ত। ‘দুর্নীতিকে সম্পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে তারা সবচেয়ে খারাপ কাজ করেছে। এমন কোনো খাত নেই যেখানে তারা দুর্নীতি করেনি।’
তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দের টাকা ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যানদের মধ্যে বিতরণ করেন। ‘এমনকি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বয়স্ক ও বিধবা ভাতা থেকে ১০-২০ শতাংশ ভাগ পান। জেলা পরিষদ গঠন করা হয়েছে এবং এর মূল কাজ জনগণের টাকা লুট করা।
বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ এখন জাতির জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘যদি আমরা আমাদের কাঁধ থেকে এই বোঝা সরাতে না পারি, তবে আমরা সবাই তাদের সঙ্গে ডুবে যাব। আমরা ডুবে যাচ্ছি।’
ঢাকার নয়াপল্টনে জনসভা নিশ্চয়ই
সরকার এখনও তাদের দলকে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় চূড়ান্ত সমাবেশের অনুমতি দেয়নি বলে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা যেমন সবসময় আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে আমাদের কর্মসূচি পালন করি, আমরা অবশ্যই ১০ ডিসেম্বর সেখানে সমাবেশ করব।
তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কোনো ঝামেলা না করে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা যাতে প্রোগ্রামটি সুন্দরভাবে করতে পারি তার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিন।’
বিএনপি নেতা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলন চলছে বলে তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চান। ‘এখন সরকারের দায়িত্ব শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে আমাদের সহযোগিতা করা।’
আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট বাংলাদেশকে মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে: ফখরুল