বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ‘অসতর্ক’ বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শিক্ষক শ্রমিক ঐক্যজোট আয়োজিত শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে যা যা করা দরকার তা করবে তাদের দল।
ফখরুল বলেন, ‘সবাই এখন (মার্কিন) ভিসা নীতিতে ভীত। যারা দুর্নীতি করেছে, অন্যায় ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত, পক্ষপাতমূলকভাবে বিচার করেছে এবং চুরি-দুর্নীতিতে জড়িত ব্যবসায়ীরাও এখন আতঙ্কিত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে বেশি ভয় দেখতে পাচ্ছি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মধ্যে। তিনি যেভাবে কথা বলছেন তা দেখে মনে হচ্ছে একজন বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ। বিচারপতি এটিএম আফজাল তার রায়ে এমনটাই বর্ণনা করেছেন। বর্তমানে তার মস্তিষ্ক আরও বিকৃত হয়েছে...যাকে পাগল বলা হয়।’
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের এই সম্মেলনে সারাদেশ থেকে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী অংশ নেন।
খালেদা জিয়ার সময় নেই এবং ৮০ বছর বয়সের কাছাকাছি হওয়ায় তার জন্য কান্নাকাটি করে কোনো লাভ নেই- এমন মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন ফখরুল।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র থেকে খালি হাতে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী: ফখরুল
তিনি বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিকভাবে আপনার (প্রধানমন্ত্রীর) সময় শেষ। আপনি দয়া করে সম্মানের সঙ্গে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। তা না হলে জনগণ আপনাকে ক্ষমতা থেকে টেনে তুলবে।’
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো কেন উদ্বিগ্ন- প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ফখরুল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছে। ‘বাইডেন প্রশাসন স্পষ্টভাবে বলেছে, যেসব দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু আছে, সেসব দেশের সঙ্গে তারা কাজ করতে চায়।’
তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার সরকার যখন অবাধ, সুষ্ঠু ও সুষ্ঠু নির্বাচন করছে, তখন নির্বাচন নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না। এমন মন্তব্য শুনে ঘোড়াও হাসে। এটা বিস্ময়কর যে, একজন প্রধানমন্ত্রী ১৫ বছর ধরে যেভাবেই ক্ষমতায় থাকুন না কেন, তিনি কখনই ভাবেন না যে তার মন্তব্যে মানুষ হাসবে।’
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনসহ চলমান এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে যোগ দিতে শিক্ষকসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নীতির ওপর নির্ভর করে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা সম্ভব হবে না। ‘অন্য কেউ এটা (সরকারকে উৎখাত) করবে না। আমাদের এটা করতে হবে। ভয়ানক দানবীয় শাসনের কবল থেকে দেশকে বাঁচাতে আমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা জিতব।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য বিদেশে ষড়যন্ত্র করছে: রিজভী
মির্জা ফখরুল বলেন, একটি অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী ও লুটেরা শাসন দীর্ঘদিন ধরে বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে দেশ শাসন করায় বাংলাদেশ রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ‘পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে জনগণ আর এই শাসনকে সহ্য করতে পারছে না।’
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার শিক্ষাখাত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক পরিবেশ ধ্বংস করেছে। ‘শিক্ষকদের যোগ্যতা বিবেচনা না করে ঘুষ ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা এখন দুর্নীতিতে লিপ্ত।
তিনি বলেন, জনগণের কাছে দায়বদ্ধতাহীন সরকার রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তন করে সুশাসন ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।
ফখরুল বলেন, ‘জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য এক দিন তাদের ভোট দিয়ে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে। সরকার সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে এই সুযোগও নষ্ট করে দিয়েছে।’
আরও পড়ুন:‘ওয়াকওভার’ করে আওয়ামী লীগকে আর সরকার গঠন করতে দেওয়া হবে না: ফখরুল