বিভিন্ন অপরাধের জন্য ২০ হাজার টাকা থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে ‘ওষুধ ও কসমেটিকস বিল, ২০২৩’- পাস হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিলটি উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
প্রস্তাবিত আইনে প্রসাধনী সামগ্রীকে এর এখতিয়ারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি প্রাথমিকভাবে ওষুধের আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন ও বিক্রয় নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেখানে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
বিলে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ওষুধ তৈরি বা নকল ওষুধ তৈরির জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে অ্যান্টিবায়োটিক অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করার এবং এই জাতীয় ওষুধের অপব্যবহার রোধে নিবন্ধিত ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির জন্য ২০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিদ্যমান আইনে এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের জেল এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা।
নকল ও ভেজাল প্রসাধনী দেশের বাজারে সয়লাব হয়ে পড়ে জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রসাধনী উৎপাদন, আমদানি, বিপণন ও বিক্রয়কে ওষুধ আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
কসমেটিক পণ্য উৎপাদন, আমদানি, সংরক্ষণ এবং বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোকে সরকারের কাছ থেকে নতুন লাইসেন্স নিতে হবে।
আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউ ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ ৪ বছর বাড়াতে সংসদে বিল উত্থাপন
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর যে কোনো ওষুধের ক্ষেত্রে প্রসাধনী উৎপাদন, বিপণন, আমদানি ও বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করবে।
লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ আইনের অধীনে প্রণীত বিধিতে মনোনীত হবে।
বিলে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নকল ও ভেজাল ওষুধ ও প্রসাধনী উৎপাদন, বিক্রয় ও বিপণনসহ অন্তত ৩০টি অপরাধ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
প্রসাধনী আমদানি, উৎপাদন এবং বিপণন — ব্যক্তিগত যত্ন এবং ত্বকের যত্নের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক যৌগের মিশ্রণ- এখন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, মাদক আইনে মামলা নিষ্পত্তির জন্য প্রতিটি জেলা শহরে আলাদা আদালত থাকবে।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, প্রসাধনী এবং একই ধরনের আইটেম ভিন্ন ভিন্ন পণ্য। কিন্তু ওষুধ প্রশাসনের অধীনে কেন দেওয়া হচ্ছে।
জাপা সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।
তিনি বলেন, ‘২৩৬টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে কিছুই করছে না। এরপরও কেন তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হবে তা পরিষ্কার নয়।’
গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এই বিলের সঙ্গে স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত।
তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যে কয়েকটি ধারা জনস্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে। তাই কোনো পীর-দরবেশের স্বার্থে তাড়াহুড়ো করে বিল পাস করা ঠিক হবে না।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রসাধনী ব্যবসায়ীদের ক্ষতি সরকারের উদ্দেশ্য নয়।
তিনি বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশ্য হল জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং ভেজাল ওষুধ ও প্রসাধনী প্রতিরোধ করা।’