ফ্যাসিবাদী সরকারের মাধ্যমে সৃষ্ট অচলাবস্থার মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ।
তিনি বলেছন, ‘বর্তমান সরকার যদি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার দিকে ফিরিয়ে নিতে চান, তাহলে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার যে দেশকে অচলাবস্থা করেছিল সেটার প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে আবারো ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে।’
আযাদ বলেন, বাংলাদেশকে গড়তে হলে আমাদেরকে ঔক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৫টায় ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে উপজেলা ও পৌর জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হামিদুর রহমান বলেন, বিগত ৫৩ বছর বাংলাদেশের মানুষ দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কবলে পড়েছে, বৈষম্যের শিকার হয়েছে। এ জন্যই জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপ্লব ঘটেছে। বুলেটের সামনে দেশের দামাল ছেলেরা বুক পেতে রক্ত দিয়েছে। হাজার হাজার লাশ পড়েছে ও ৩০ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন
অন্তবর্তী সরকারকে উদ্দ্যেশে করে তিনি বলেন, জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে। তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংসদে সংখ্যানুপাতিক আসন বিন্যাস করতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থার মধ্যে বিগত সরকারের দুর্নীতিবাজদের বিচারের দাবিও জানান আযাদ।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, বর্তমান সরকার এসেছিল বৈষম্য দূর করতে, এখনো বৈষম্যমুক্ত হয়নি দেশ। আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিকের অধিকার সমান। সংবিধানের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ কার্যকর হয়নি এখনো।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট গণভবন ঘেরাওয়ের কথা বুঝতে পেরে নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। ১৫ বছর ছাত্রদের যে ইতিহাস পড়ানো হয়েছিল, ছাত্র-জনতা সেদিন ফুসে উঠে ক্রেন দিয়ে সেগুলো ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত সরকার সম্পদের সঠিক ব্যবহার না করে শুধু লুটপাটে ব্যস্ত ছিল। তারা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে, চর দখলের মতো ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল করে ক্যান্টনম্যান্ট তৈরি করেছিল। যে কারণে মেধাবীরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। শুধু সমদ্রের সম্পদ ব্যবহার করে দেশের ছয় মাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব ছিল।
হামিদুর রহমান বলেন, যে উদ্দেশ্য এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। দেশে সুশাসন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় পাঁচবার বাংলাদেশ দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে। গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিস্টের দোসরদের বিচার করতে হবে। তিনি সর্বশেষে জামায়াত নেতা আজাহারুল ইসলামসহ জেলবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ‘ক্ষমতায় যাওয়া নয়, সুশাসন কায়েম করাই জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশ্য’
ফরিদপুর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ইমারত হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও বোয়ালমারী পৌর জামায়াতের আমীর মাওলানা সৈয়দ নিয়ামুল হাসানের সঞ্চালনায় জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ দেলোয়ার হুসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য শামসুল ইসলাম আল-বরাটী, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ বদরুদ্দীন, সেক্রেটারি আব্দুল ওহাব, ফরিদপুর-১ আসনের জামায়াতের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ড. মো. ইলিয়াস মোল্যা, জেলা নায়েবে আমির আবু হারেস মোল্যা প্রমুখ।