এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে আমতলী থানাহাজতে এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া শানু হাওলাদার উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে আসামি শানু ওয়াস রুমে যাওয়ার কথা বললে পুলিশ তাকে সেখানে নিয়ে যায়। পরে এক ফাঁকে তিনি ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির কক্ষে ফ্যানের সাথে রশি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
তবে শানুর পরিবারের দাবি তাকে হাজতে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। তারা জানান, গুলিশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামের ইব্রাহিম হত্যা মামলায় শানুর সৎভাই মিজানুর রহমান হাওলাদার এজাহারভুক্ত আসামি। এ মামলায় পুলিশ সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে শানুকে আমতলী থানায় ধরে নিয়ে আসে।
পরে ওসি বাশার ও মনোরঞ্জন তার পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু টাকা না পেয়ে তাকে থানাহাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন শুরু করে পুলিশ। মঙ্গলবার তার ছেলে সাকিব হোসেন ওসি বাশারকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিলেও নির্যাতন বন্ধ করা হয়নি।
সাকিব বলেন, ‘বুধবার সকালে আমি বাবার সাথে দেখা করতে থানায় আসি, কিন্তু আমাকে দেখা করতে না দিয়ে ওসি বাশার ও মনোরঞ্জন গালাগাল করে তাড়িয়ে দেয়। সারা দিন আমাকে বাবার সাথে দেখা করতে দেয়নি। ওসি বলেন টাকা নিয়ে আস তারপর দেখা করতে দেব।’
শানুর শ্যালক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘দুলাভাইকে ধরে আনার পর থেকে আমি থানা প্রাঙ্গণে ছিলাম। পুলিশ তাকে টাকার জন্য বেধড়ক মারধর করেছে। তার চিৎকার শুনেছি। বহুবার চেষ্টা করেছি তার সাথে দেখা করতে, কিন্তু পুলিশ দেখা করতে দেয়নি। উল্টো আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে।’
এ ঘটনা তদন্তে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) তোফায়েল আহম্মেদকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, ‘নিহত শানু হাওলাদারের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে না।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহম্মেদ জানান, দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন এবং ও ডিউটি অফিসার এএসআই মো. আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’