পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মত উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে দুদিনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে পৌঁছেছে।
পঞ্চগড়ের করতোয়া নদী ও দিনাজপুর জেলার আত্রাই নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে সোমবার সারা দিনে ২৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে নিখোঁজের সংখ্যা ৪০ জনে নেমে এসেছে।
সোমবার রাতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে স্থাপিত জরুরি তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্রে (কন্ট্রোল রুম) অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দিপংকর রায় জানান, দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এসময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিতীয় দিনে উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে ২৫ জন নারী, ১৩ জন শিশু ও ১২ জন পুরুষ রয়েছে।
এদের মধ্যে ৭ জনের লাশ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: করতোয়ায় ট্রলারডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬, এখনও নিখোঁজ ৪০
কন্ট্রোল রুম, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, রাজশাহী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযান শুরু করে। নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে বের করতে ভোর থেকেই করতোয়ার দু’পাড়ে মানুষ আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা এলাকায় মানুষের ঢল নামে। তবে বিভিন্ন এলাকা থেকে দেখতে আসা মানুষের ভিড়ও ছিল লক্ষণীয়। ডুবুরি দলের উদ্ধার অভিযানে আধুনিক যন্ত্রপাতির স্বল্পতায় স্থানীয় মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। একপর্যায়ে নিখোঁজদের উদ্ধারে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ নদীতে নেমে পড়েন। তারা নদীতে মানববর্ম (মানববন্ধনের মত করে) নদীতে নেমে লাশ খুঁজতে থাকে। অনেকে লাঠি নিয়ে ছোট ছোট নৌকায় নদীর এপার থেকে ওপার খোঁজাখুজি শুরু করে। দুপুরের পর থেকে একে একে বিভিন্ন এলাকায় লাশ ভেসে উঠতে থাকে।
একেকটা লাশ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে শত শত মানুষ পরিচয় খুঁজতে সেখানে ভিড় করে। ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে খুঁজতে থাকে স্বজন হারানো মানুষেরা। মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ছবিসহ নিখোঁজদের ছবি টানিয়ে দেয়ার স্থানে শত শত মানুষ স্বজনদের দেখতে ভিড় জমান।
দুর্ঘটনার পর পরই পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায়কে কমিটির প্রধান করা হয়। কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া, ঘাট ইজারাদারের অবহেলা, মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দের অবহেলার কারণেই মূলত এই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। শৃঙ্খলা ও সাবধানতা অবলম্বন করা হলে এ দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যেত।
আরও পড়ুন: করতোয়ায় ট্রলারডুবি: নিহত বেড়ে ৩৬
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহাবুবুল ইসলাম জানান, আমরা উদ্ধার অভিযান নিবিড়ভাবে পরিচালনা করছি। গত দু'দিনে স্থানীয়দের সহায়তায় ৫০টি লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।। নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম শামীম জানান, অধিকাংশ মানুষের মৃতদেহ সৎকার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান দীপঙ্কর রায় জানান, আমরা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করতে পারবো। ইজারাদারের অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। তবে আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, নৌকাডুবির ঘটনায় মৃত, আহতসহ সকল ব্যক্তিকেই আমরা বিভিন্নভাবে সেবা ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: করতোয়ায় ট্রলারডুবি: নিহত বেড়ে ২৫