কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে উজানের ঢলে গঙ্গাধর নদীর পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার সাথে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, বাগান, বাঁশঝাড়, পাকা স্থাপনা। শেষ সম্বল হারিয়ে দিশেহারা নদীর তীরবর্তী মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খরস্রোতা গঙ্গাধর সারা বছরই কম-বেশি বল্লভেরখাস ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে তাণ্ডব চালায়। পানি বৃদ্ধি বা কমে গেলে এর ভয়াবহতা বাড়ে দ্বিগুন। গত কয়েক বছর থেকে তা অগ্রাসন চালাচ্ছে ওই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে। এবার তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে কৃষ্ণপুর জেলেপাড়া, রামদত্ত ও রঘুরভিটা এই তিন গ্রাম । এ বছর ওই তিন গ্রামে ভেঙেছে প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়ি। গত একসপ্তাহে ভেঙেছে অন্তত ১৫টি বাড়ি। বসতভিটা হারিয়ে তাদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন রঘুরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ও অন্যের বাড়িতে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে যমুনায় ভয়াবহ ভাঙন, অর্ধশত ঘরবাড়ি বিলীন
১৯০৩ সালে স্থাপিত রঘুরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিদ্যালয়টিও এখন হুমকির মুখে। নদী থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০০ গজ। ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে কালাডাঙ্গা জামে মসজিদ, রামদত্ত জামে মসজিদ, রামদত্ত মহিলা হাফেজা মাদরাসা, কৃষ্ণপুর নুরানী হাফেজিয়া মাদরাসা, কৃষ্ণপুরের একমাত্র পাকা সড়কসহ অনেক পাকা স্থাপনা।
জেলেপাড়ার শিথিল চন্দ্র বিশ্বাস, ভানুরাম বিশ্বাস জানান, তাদের দুই জনেরই বাড়ি ও বসতভিটা পরপর তিন বার গিলে খেয়েছে আগ্রাসী গঙ্গাধর। অন্যত্র জমি কিনে বসবাস করার ক্ষমতা নেই তাই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে সেখানেই বসবাস করছেন।
একই অবস্থা সুবেরাম বিশ্বাসের। গঙ্গাধর তাকে ভিটেহারা করেছে চার বার। গত কয়েক বছর থেকে ভাঙনের কবলে পড়েও নাড়ির টানে জন্মভূমির মায়ায় বারবার ভিটে বদল করে বসবাস করছেন হরিপদ বিশ্বাস, সুমন বিশ্বাস, টরে বিশ্বাস, রঘুনাথ বিশ্বাসসহ অনেকেই।
রঘুর ভিটা গ্রামের সুলতান, কদর উদ্দিন জানান, তাদের আবাদি জমি অনেক আগেই গিলে খেয়েছে নদী। এখন বাড়ির ভিটায় ভাঙন ধরেছে। ঘরবাড়ি অনত্র সরিয়ে নিতে হচ্ছে তাদের। একই অবস্থা রামদত্ত গ্রামের।
আরও পড়ুন: তিস্তার ভাঙন: কুড়িগ্রামের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে
বল্লভেরখাস ইউপি চেয়ারম্যান আকমল হোসেন জানান, গত কয়েক বছর থেকে গঙ্গাধর আগ্রাসন চালাচ্ছে এ গ্রামগুলোতে। একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করেও কোন সুফল মেলেনি। ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে সেখানে জিওব্যাগ ফেলা দরকার।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক মো. মোক্তার হোসেন জানান, রঘুরভিটা থেকে কৃষ্ণপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্যাপক ভাঙন চালাচ্ছে গঙ্গাধর নদী। অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। এই নদীর ভাঙন রোধে ২ বছর আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। এটি পাশ হলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।
তিনি জানান, যেহেতু ব্যাপক এলাকা জুড়ে ভাঙন চলমান, তাই আপদকালীন কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।