খুলনায় নিখোঁজ রহিমা খাতুনের (৫৫) খোঁজ গত ১৫ দিনেও মেলেনি। মহানগরীর দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা এলাকার বণিকপাড়া থেকে নিখোঁজ এই ঘটনায় পুলিশ ও র্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন চার জনকে গ্রেপ্তার করলেও নিখোঁজের কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি।
র্যাব-৬ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোসতাক আহমেদ বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর র্যাব ছায়া তদন্ত চালিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সূত্র উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনার পর থেকেই ওই নারীর মোবাইল নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। তার মোবাইল নম্বরটি ঘটনার দিন ঘটনাস্থলের অদূরে যোগীপোল এলাকায় সর্বশেষ সচল ছিল।’
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের পাশাপাশি র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা ঘটনার তদন্ত করছে। তবে এখনও উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তার মোবাইল ডিভাইসটিও শনাক্ত করা যায়নি। তবে ঘটনার দিন রাত ১০টার পর যোগীপোল এলাকায় তার মোবাইলটি সচল ছিল। এরপর বন্ধ হয়।’
আরও পড়ুন: নিখোঁজ মাকে ফিরে পেতে ৬ সন্তানের আকুতি
তিনি বলেন, ‘র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া দুজনকে ৪ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আরও দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য বের করা হয়েছে। তবে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন। বাদী এই মামলার এজাহারে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক চার জনের নাম উল্লেখ করেন।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন হলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশলী কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া। অন্য তিন জন হলেন-দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ ও জুয়েল।
দৌলতপুর থানা পুলিশ জানায়, ৪ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া থেকে র্যাব-৬ এর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে জড়িত সন্দেহে মহিউদ্দিন ও পলাশকে গ্রেপ্তার করে। পরে গোলাম কিবরিয়া ও জুয়েলকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন: খুলনায় ৫৫ বছর বয়সী এক নারী নিখোঁজ
নিখোঁজ রহিমা খাতুনের মেয়ে মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘একটা মানুষ অদৃশ্য হয়ে গেল। এখনও তার খোঁজ মেলেনি। মা হারানোর পর থেকে পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন।’
তিনি দাবি করেন, তার মা ফৌজদারি মামলার বাদী ছিলেন। মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য আসামিরা বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিতো। এমনকি তাদের ঘরবাড়িও ভাঙচুর করে। ভাঙচুরের দিন তার মাকে আসামিরা মারধর করে। যাদের পুলিশ ও র্যাব আটক করেছে তারা তাদের প্রতিবেশী। তাদের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করা হয়েছিল। তবে এদের একজন সহযোগী হেলাল শরীফকে এখনও আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সবাইকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার মায়ের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রহিমা খাতুন। ঘণ্টা পার হলেও তিনি না ফিরলে মায়ের খোঁজে সন্তানরা নিচে নেমে ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন দৌলতপুর থানায়।