ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে প্রবল বর্ষণের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে যাত্রীরা যানজটের কবলে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক ইউএনবিকে জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সোমবার রাতে সিত্রাং দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানলে রাজধানীসহ বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের সম্মুখীন হয়। এছাড়া গাছ উপড়ে পড়ে, মানুষ নিহত এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়।
সকালে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের ঢাকার মহাসড়কগুলো থেকে উপড়ে পড়া গাছগুলোকে সরাতে দেখা গেছে।
জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন চলাচল শ্লথ হওয়ায় সকালে অফিসগামীসহ অন্যান্যরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকা পড়েন।
সরেজমিনে দেখা যায় উত্তরখান, দক্ষিণখান, ভাটারা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, আজিমপুর, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, জুরাইনসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ঘাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
খিলক্ষেত থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা রয়েছে এবং বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের চলমান কাজ কেবল যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।
সকালে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় টঙ্গীর নিকটবর্তী আবদুল্লাহপুর এলাকায় চলাচল অত্যন্ত ধীর হওয়ায় হোটেল লে মেরিডিয়ান থেকে ঢাকা বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত দীর্ঘ সারিতে বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহনগুলো আটকে থাকে।
এদিকে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী সদর দপ্তরের সামনের রাস্তা সকালে জলাবদ্ধ ছিল- যা ফ্লাইওভার দিয়ে খিলক্ষেত এলাকা থেকে বনানী অভিমুখী যাত্রীদের জন্য আরেকটি দীর্ঘ সারি তৈরি করেছিল।
র্যাডিসন ব্লু হোটেলের দিকে কুড়িল ফ্লাইওভার নামার অংশও পানির নিচে ছিল এবং বনানীর দিকে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি করে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ট্রাফিক (ঢাকা উত্তর) আবু রায়হান মো. সালেহ ইউএনবিকে বলেন, গতকালের টানা বৃষ্টিতে নৌবাহিনী সদর দপ্তরের সামনের সড়কসহ বেশ কয়েকটি স্থানে জলাবদ্ধতা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল থেকে উত্তরা-মহাখালী পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে লোকজন আটকে ছিল। তবে মিরপুর এলাকায় যান চলাচল নির্বিঘ্ন ছিল।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: রাজধানীতে বৃষ্টিতে জীবনযাত্রা ব্যাহত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ রাস্তা থেকে ৪৭টি পড়ে যাওয়া গাছ সরিয়ে নিয়েছে।
এছাড়া মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ১৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের গুদাম পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় সারাদেশে ৩২৯টি গাছ উপড়ে গেছে এবং ৩৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সোমবার মধ্যরাতে ভোলার কাছে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে এবং বৃষ্টিপাত শুরু করে দ্রুত দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিত্রাং এখন ঢাকা-কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে।