দেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্কে আরেকটি মাইলফলক বহুল প্রতীক্ষিত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল রেললাইন শনিবার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নবনির্মিত কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে এক অনুষ্ঠানে ট্রেন চলাচলের জন্য নতুন রেলপথ (চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার) উন্মোচনের করায় দক্ষিণাঞ্চল উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী পতাকা উড়িয়ে ট্রেনেরে যাত্রা শুরু করেন এবং কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন থেকে রামু রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত যাত্রা করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ কক্সবাজার রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। আমি রেললাইন উদ্বোধনের মাধ্যমে আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। এটি এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। সেই দাবি আজ পূরণ হয়েছে। আজ গর্ব অনুভবের দিন।’
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন শনিবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাকে স্বাগত জানান এবং স্থানীয় শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর।
অনুষ্ঠানে রেললাইন প্রকল্পের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
নতুন এই রেললাইনের ফলে চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত দ্রুত ও নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচল নিশ্চিত হবে।
ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের প্রথম রেলপথের সংযোগ স্থাপনে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও ঘুমধুমে ৯টি স্টেশন রয়েছে।
এই স্টেশনগুলোতে সম্পূর্ণ কম্পিউটার-ভিত্তিক ইন্টারলকিং সিগন্যাল সিস্টেম এবং একটি সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক থাকছে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে 'মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ' উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ফাস্ট ট্র্যাক মেগা রেলওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়।
নতুন রেললাইনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম আগামী মাসে শুরু হবে।
ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে (টিএআর) নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে এটি মিয়ানমার এবং এর বাইরেও যোগাযোগ উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে উৎসবমুখর কক্সবাজার
রেললাইনটি চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, রামু ও উখিয়া উপজেলাসহ ৮টি উপজেলা অতিক্রম করবে।
লাইনটি দোহাজারী গ্রাম থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ দিকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলবে। প্রথম ২৯ কিলোমিটার অংশ চট্টগ্রাম জেলার সমতল, উন্মুক্ত ভূমিজুড়ে এবং পরবর্তী ৩৩ কিলোমিটার কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কৃষিজমি ও বনভূমির মধ্য দিয়ে যাবে।
প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে রেললাইনটি মিয়ানমার সীমান্তের পাশাপাশি মাতারবাড়ী দ্বীপে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। সম্প্রসারিত অংশে দু’টি স্টেশন থাকবে- উখিয়া ও ঘুমধুম।
এতে থাকবে ৯টি কম্পিউটারভিত্তিক ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম ও ৯টি ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম।
সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট, সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় একটি ফ্লাইওভার, ১৪৪ টি লেভেল ক্রসিং এবং রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দু’টি মহাসড়ক ক্রসিং।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী