চট্টগ্রামের পটিয়ায় আসামি ধরিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও তাদের ওপর লাঠিচার্জের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (২ জুলাই) সকাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে থানার সামনে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি শেষে থানার সামনে শান্তিপূর্ণ স্লোগান দেওয়ার সময় পুলিশ অতর্কিত লাঠিচার্জ করলে পটিয়া থানা চত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সংঘটিত এ ঘটনায় অন্তত ১১ জন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত হন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।
আহতদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক আশরাফুল ইসলাম তৌকির (২১) ও সাইফুল ইসলাম (১৭) গুরুতর আহত হয়ে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি শেষ করে থানার মোড়ে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা সেখানে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ নেতা দীপংককে দেখতে পেয়ে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার না করায় ছাত্ররা বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে গতকাল রাতেই বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী থানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
আহত আশরাফুল ইসলাম তৌকির অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলাম। দীপংকরকে দেখে পুলিশকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই পুলিশ আমাদের ওপর আক্রমণ চালায়। কোনো কারণ ছাড়াই তারা লাঠিচার্জ করে।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক গোলাম মওলা মাশরাফ বলেন, ‘পুলিশ এখন বট, দুই নম্বর ও ফাও হয়ে গেছে। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজদের রক্ষা করছে আর নিরীহ ছাত্রদের পেটাচ্ছে। আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই না, এই বিপ্লব মরার জন্যই করছি।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ধরতে ব্যর্থ পুলিশ এখন আন্দোলনকারীদের হুমকি দিচ্ছে। তবে আমরা থেমে থাকব না।’
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. নওশাদ জানান, ‘আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ছাত্রদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে, ঘটনার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ সময় তারা বলেন, ‘ওসি ও সংশ্লিষ্ট এসআইদের অপসারণসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ঘটনার বিচার না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেব।’
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাহেদ মো. নাজমুন নূর বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ছাত্রলীগের এক নেতাকে থানায় নিয়ে এসে মব সৃষ্টি করে মারধর করেছিলেন। এ সময় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে ৩-৪ জন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, বুধবার সকাল থেকে ওসির অপসারণের দাবি করে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন ছাত্ররা। তবে বিকল্প সড়ক বাইপাস দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।