সিলেটের জাফলংয়ে রিসোর্টের পাশ থেকে পর্যটকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ওই পর্যটকের স্ত্রী এবং তার কথিত পরকীয়া প্রেমিকসহ মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে জাফলংয়ে রিসোর্টের পাশ থেকে পর্যটকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় প্রেস ব্রিফিং করে বিষয়টি জানিয়েছেন-সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি জানান, ভিকটিমের নাম আলে ইমরান (৩২)। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার গুরই গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে।
এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়।
তিনি জানান, গত সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে গোয়াইনঘাট থানাধীন ৩ নম্বর পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের জাফলং বল্লাঘাট রিভারভিউ রিসোর্ট এর পাশে এক অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশ পাথরচাপা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন থানায় সংবাদ দিলে তাৎক্ষণিকভাবে গোয়াইনঘাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: খুলনায় ১২০ কেজি হরিণের মাংস জব্দ, আটক ১
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত আসামিদের শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে গোয়াইনঘাট থানার পুলিশ তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৯ এপ্রিল) রাতে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা শাখা পরিচালিত পৃথক দুটি অভিযানে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানার বেলদি গাজীরটেক গ্রামের মো. জিন্নাতের ছেলে নাদিম আহমেদ নাঈমকে (১৯) নিজ বাড়ি থেকে ও ভিকটিম আলে ইমরানের স্ত্রী কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার ছেত্রা গ্রামের মৃত আব্দুস ছাত্তারের মেয়ে খুশনাহারকে (২১) ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া গ্রেপ্তার নাদিম খুশনাহারের পরকীয়া প্রেমিকের বন্ধু বা সহযোগী।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম আলে ইমরানের স্ত্রী খুশনাহারের সঙ্গে হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামি মাহিদুল হাসান মাহিনের (২৪) দীর্ঘ দুই থেকে আড়াই বছরের প্রেম চলছে।
আসামি মাহিন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জিএম পদে কর্মরত।
ভিকটিম আলে ইমরানের সঙ্গে গত ৫ বছর আগে খুশনাহারের বিয়ে হয়। মাহিনের সঙ্গে প্রেমে জড়ানোর পর থেকেই ভিকটিমের স্ত্রী খুশনাহার এবং তার প্রেমিক মাহিন বিভিন্ন সময় ভিকটিম আলে ইমরানকে হত্যা করার চেষ্টা করে আসছিলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় হত্যা করার উদ্দেশে খুশনাহার তার স্বামী আলে ইমরানকে নিয়ে বেড়ানোর কথা বলে গত ১৫ এপ্রিল রাতে ভৈরব থেকে ট্রেনযোগে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন।
অন্যদিকে একই দিনে প্রেমিক মাহিন, মাহিনের অফিসে কর্মরত গ্রেপ্তারকৃত আসামি নাদিম এবং অপর পলাতক সহযোগী ঢাকার কমলাপুর থেকে ট্রেনযোগে সিলেটের উদ্দেশে রওয়ানা হন।
গত রবিবার (১৬ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৮টা থেকে জাফলংয়ের বল্লাঘাটস্থ ‘রিভারভিউ রিসোর্ট অ্যান্ড আবাসিক হোটেল’ এর ১০১ নম্বর কক্ষে ভিকটিম আলে ইমরান এবং তার স্ত্রী খুশনাহার অবস্থান করেন এবং অন্য তিন আসামি জাফলংয়ের বল্লাঘাটে হোটেল শাহ আমিনে অবস্থান করেন।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমের স্ত্রী খোশনাহার হত্যাকাণ্ড সংঘটনের পূর্বে কৌশলে তাদের অবস্থানরত হোটেল কক্ষের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন। পরবর্তীতে মাথাব্যথার ওষুধের কথা বলে রাত ১০টার সময় ভিকটিম আলে ইমরানকে তার স্ত্রী খুশনাহার ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর যখন ভিকটিম আলে ইমরান ঘুমিয়ে যান, তখন স্ত্রী খুশনাহার তার প্রেমিক মাহিনকে হোটেল রিয়ারভিউ রিসোর্ট অ্যান্ড আবাসিক হোটেলে আসার জন্য বলেন।
রাত আনুমানিক ১২টায় হত্যাকারী মাহিন তার অপর দুই সহযোগীকে নিয়ে হোটেল রিয়ারভিউ এর ১০১ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে এবং রাত ২টায় আলে ইমরানের স্ত্রী খুশনাহার ও প্রেমিক মাহিন গলায় গামছা পেঁচিয়ে আলে ইমরানকে হত্যা করেন।
এ সময় গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামি নাদিম আলে ইমরানের পা চেপে ধরেন এবং পলাতক অপর সহযোগী রুমের বাইরে পাহারা দেন। একসময় আলে ইমরানের মৃত্যু নিশ্চিত হলে আনুমানিক রাত ৩টায় হত্যাকারী মাহিন ও অপর দুই সহযোগী আলে ইমরানের লাশ লুকিয়ে রাখার উদ্দেশে হোটেলের পাশে পাথরচাপা দিয়ে রাখে।
পরবর্তীতে হত্যাকারীরা হোটেল থেকে রাত আনুমানিক সাড়ে ৪টায় বের হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে পালিয়ে যায়।
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার আসামিরা উক্ত হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন।
গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট জেলা পুলিশ কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে আসামি খুশনাহার ও নাদিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তবে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় খুশনাহারের পরকীয়া প্রেমিক মাহিন ও তার আরেক সহযোগী রাকিবকে গ্রেপ্তারে কিশোরগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করছিলো পুলিশ।
এছাড়া প্রেস ব্রিফিং শেষ হওয়া মাত্র খবর আসে-ওই দুইজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এসময় সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেপ্তার ওই দুইজনকে সিলেট নিয়ে আসা হবে এবং আগে গ্রেপ্তার হওয়া দুইজনকে আজই আদালতে পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে বিদ্যুৎ কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০ জনের নামে মামলা, আটক ১
শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার রায়: আদালত চত্বরে বিক্ষোভ, ছাত্রদল নেতা আটক