বরিশাল সদর উপজেলা কমপ্লেক্সে ইউএনও’র ওপর হামলার চেষ্টাকালে আনসার সদস্যদের গুলি ও পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষে পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হবার ঘটনা ঘটেছে। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানান।
বুধবার রাত ১১টার পর বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমানের ওপর হামলার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে ৩ পুলিশ ও ২ আনসার সদস্য রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ চন্দ্রিমা উদ্যানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা কর্মীদের সংঘর্ষ
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন জানান, ‘বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় প্রাঙ্গনে রাতে ব্যানার খুলতে যায় নগর ভবনের কর্মচারীরা। এসময় বাসভবন থেকে বের হয়ে উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ড থেকে ব্যানার খোলার কারণ জানা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের সাথে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কথাকাটাকাটি হয়।’
উপজেলা কমপ্লেক্সে ইউএনও’র নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন আনসার সদস্য জানান, কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ব্যানার খোলার কথা বলে কম্পাউন্ডে ঢোকা ২৫ থেকে ৩০ জন ইউএনও স্যারের বাসভবনে ঢুকে তাকে ঘিরে ফেলে। তাকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে আনসারদের সাথে হাতাহাতির একপর্যায়ে হামলা চালানো হলে আনসার সদস্যরা গুলি ছোড়ে। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়।
আরও পড়ুনঃ সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আনসার সদস্য নিহত
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ নগর পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর গুলির খবর শুনে আরও নেতাকর্মীরা জড়ো হয় সেখানে। তাদের নিয়ে মেয়র উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকতে গেলে দ্বিতীয় দফায় ভেতর থেকে গুলি ছোড়ে আনসার সদস্যরা। গুলির মুখে ভেতরে ঢুকতে না পেরে কমপ্লেক্সের বাইরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবস্থান নেন মেয়র সাদিক। ছাত্রলীগ কর্মীরা এসময় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধসহ একটি বাস ভাঙচুর করে। পরে মেয়র ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
উপজেলা কমপ্লেক্সে এসব ঘটনা চলার মধ্যেই সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পৌছায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। বাস ভাংচুরসহ সড়ক অবরোধ ঠেকাতে গেলে তাদের সাথে ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ আহত হয় প্রায় ৩০ জন। এক পর্যায়ে পিছু হটে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা। পরে রাত তিনটার দিকে অবরোধ তুলে নিলে পুনরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
গুলিবিদ্ধ আহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার বাবু, হারুন অর রশিদ ও তানভীর নামে তিনজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থায় অবনতি হলে তানভীরকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারীতে আ’লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত এক
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ৮ থেকে ১০টি মোটর সাইকেলে করে ১৫ থেকে ২০ জন আমার উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে ঢুকে ঘোরাফেরা করছিল। আমি তাদেরকে এখানে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা জোর করে আমার ঘরে ঢুকে পড়ে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল রাজীব নামে এক ছাত্রলীগ নেতা।’
রাত সাড়ে ৩ টায় সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তার বাসভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিসিসির কর্মীরা সেখানে তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন। অথচ তাদের ওপর ন্যাক্কারজনক ভাবে গুলি চালানো হয়েছে। ঘটনা সর্ম্পকে জানতে আমি সেখানে গেলে আমার ওপর গুলি চালানো হয়। আমার বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। বিচার চাই। এভাবে তো দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।’