গাজীপুরে পাওনা মাত্র আড়াই হাজার টাকা নিয়ে বিরোধের জেরেই দুই বেকারি শ্রমিক খুন হয়েছে। যাদুর কৌশল শেখানোর কথা বলে হাত পা বেঁধে হত্যা করে তাদের বিলের পানিতে ফেলে দেয়া হয়। বিলের পানিতে ভাসমান অবস্থায় ওই দুই শ্রমিকের লাশ উদ্ধারের চার দিন পর এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন
নিহত মাহমুদুল হাসান (২০) রংপুরের মিঠাপুর থানার চাঁদপাড়া গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে এবং মো. রাকিব হোসেন (১৮) নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার সাতনাই কলোনী এলাকার আলম মিয়া। তারা দুজনেই গাজীপুরের কোনাবাড়ি থানাধীন আমবাগ শাহানা বেকারীর কর্মচারী ছিলেন।
গ্রেপ্তার হওয়া রাসেল প্রধান (২৫) গাইবান্ধার গোবিন্ধগঞ্জের কিসমত দুর্গাপুর মধ্যপাড়া এলাকার মুনসুর আলীর ছেলে এবং মো. শৈকত সরকার (২৪) বগুড়ার ধুনট থানার শেলমারী এলাকার সাইদুল সরকারের ছেলে। রাসেল ওই একই বেকারীর কর্মচারী।
আরও পড়ুনঃ বগুড়ায় যৌতুক নিয়ে বিরোধে জামাইয়ের ছুরিকাঘাতে শ্বশুর খুন
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার জাকির হাসান জানান,গত বুধবার রাতে নগরীর বাঘিয়া বিল থেকে দুটি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ঘটনাস্থলকে তথ্য প্রযুক্তির আওতায় এনে নিহতদের মোবাইল ফোন ট্রাক করা হয়। কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় অভিযান চালিয়ে খাবার হোটেলের মালিক সৈকতের কাছ থেকে নিহতদের ফোন উদ্ধার করা হয়। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ঘটনার হোতা রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাসেল পুলিশকে জানায়, মাহমুদুল হাসানের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা ধার নেয় রাসেল। পাওনা টাকা না দেয়ার বিরোধ বাধে। এর এক পর্যায়ে রাসেল যাদুর কৌশল শেখানোর কথা বলে মাহমুদুল ও রাকিবের হাত পা বেঁধে হত্যা করে বিলের পানিতে ডুবিয়ে রাখে।
আরও পড়ুনঃ বিয়ে করায় ছেলেদের হাতে খুন হলেন বাবা
রাসেলের বরাতে উপ-কমিশনার জাকির হাসান জানান, কোনাবাড়ি থানাধীন আমবাগ শাহানা বেকারীতে কাজ করার সুবাদে মাহমুদুল, রাসেল এবং রাকিব হোসেনের মধ্যে বন্ধত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। কিছুদিন আগে মাহমুদুল হাসানের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা ধার নেয় রাসেল প্রধান। সেই পাওনা টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে ক্ষিপ্ত হয় রাসেল প্রধান। এরই জের ধরে গত ৩ জুলাই তারা আমবাগ পুর্বপাড়া এলাকায় বেড়াতে যায়। সেখানে যাদু দেখানোর কথা বলে রাসেল কৌশলে মাহমুদুল ও রাকিবের হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে মাহমুদুলকে পাশের বিলের পানিতে চুবিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে রাসেল। রাকিব এ বিষয় অন্যদের বলে দেয়ার হুমকি দিলে তাকেও একটি সীমানা পিলার দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। পরে দুইজনকে পানিতে ফেলে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রেখে পালিয়ে যায় রাসেল। স্থানীয়রা মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে লাশ দেখতে পেয়ে ৭ জুলাই রাতে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ওই দিন রাতে অজ্ঞাত পরিচয়ে লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করাতে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
আরও পড়ুনঃ চট্টগ্রামে ভাবির ছুরিকাঘাতে দেবর খুন
এ ঘটনায় জিএমপি কোনাবাড়ি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তাপস কুমার ওঝা বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রাসেল প্রধানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লাশ দুটির পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। এছাড়া হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়।