শেরপুরে চিকিৎসক, নার্স, লোকবলের সংকটে ধুকছে জেলার সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। পাঁচ উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা হাসপাতালগুলোর অবস্থাও একই। এই অবস্থায় অবিলম্বে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও লোকবল সংকট নিরসন করে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সংগঠনের নেতারা।
আরও পড়ুনঃ চীনের ২০ হাজার ৮শ ডোজ টিকা পেল শেরপুর
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শেরপুরে প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও আর্থিক অনুমোদন না মেলায় ১০০ শয্যার বরাদ্দ দিয়েই চালাতে হচ্ছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১৯ জন। অথচ ১০০ শয্যার জন্যই চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ সংখ্যা ৩৬ জন। গুরুত্বপূর্ণ জরুরি বিভাগের তিন চিকিৎসকের সবগুলো পদ খালি, চার মেডিকেল অফিসারের দুই পদই শূন্য। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১০টি পদও শূন্য রয়েছে। নার্সের ৮৯টি পদের মধ্যে শূন্য পদের সংখ্যা ১৭টি। এছাড়া আয়া, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংকট রয়েছে। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে দুই চিকিৎসক আট নার্সসহ ১৭ জন স্টাফ আইসোলেশনে রয়েছেন। তাছাড়া অন্য চার উপজেলার কোন হাসপাতালেই পাঁচ থেকে ছয় জনের বেশি চিকিৎসক নেই। যেখানে অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ সংখ্যা ১৪ জন করে।
আরও পড়ুনঃ খুলনা বিভাগে করোনায় ৪৮ মৃত্যু, শনাক্ত ১৬৪২
হাসাপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. খাইরুল কবির সুমন জানান, শেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নেয় এবং ইনডোরে ৩০০ থেকে ৩৫০ রোগী ভর্তি থাকে। তার মধ্যে বতর্মানে ১০০ বেডের করোনা ইউনিটে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। ১০০ শয্যার বরাদ্দ দিয়ে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল চালাতে গিয়ে ভর্তি রোগীদের ওষুধ ও খাবারের যোগান দিতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ যশোরে ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গে ১৭ মৃত্যু
নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির আহবায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, চিকিৎসক-নার্স ও লোকবলের অভাবে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এতে অনেক সময় তাদের আচরণও রুক্ষ হয়ে ওঠছে। অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এখন জেলার হাসপাতালগুলো যেন রেফার্ড হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করি।
আরও পড়ুনঃ রামেকের করোনা ইউনিটে একদিনে ১৪ মৃত্যু
হাসপাতাল সূত্রগুলো জানায়, করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে অক্সিজেনের সংকট না থাকলেও আইসিইউ না থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা করা যায় না। সেক্ষেত্রে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে নেওয়ার পথেই কয়েকজন রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। তিনটি ভেন্টিলেটর এবং চারটি হাইফ্লো নজেল ক্যানুলা থাকলেও লোকবলের অভাবে সেগুলো ঠিকমতো চালু করা যাচ্ছে না।
চিকিৎসকরা জানান, এমনিতেই চিকিৎসক এবং লোকবলের সংকট রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভেন্টিলেশন কিংবা হাইফ্লো নজেল ক্যানুলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হলে অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা সংকট আরও বাড়বে। এজন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় মুহূর্ত ছাড়া সেগুলো ব্যবহার করা যায় না।
আরও পড়ুনঃ খুলনায় করোনা ও উপসর্গে ১৭ মৃত্যু
চিকিৎসক, নার্স ও লোকবল সংকটের কারণে হাসপাতালে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দিতে না পারার কথা কথা স্বীকার করেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. এ.কে.এম. আনওয়ারুর রউফ। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে বারবার অবহিত করা হলেও শূন্যপদ পূরণ হচ্ছে না। চিকিৎসক ও লোকবল পেলে হাসপাতালের সেবার মান আরও বাড়বে এবং কাঙ্খিত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে সংকটের মধ্যেও করোনা রোগী এবং সাধারণ রোগীদের যথাসম্ভব আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।