কিছুতেই থামছে না সিলেটের সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে বিভাগের তিনটি সড়কে প্রাণ গেলো চার জনের।
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের মাধবপুর উপজেলার রতনপুর নামক স্থানে দ্রুতগামী একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।
মাধবপুর থানার উপপরিদর্শক(এসআই) রঞ্জন ভৌমিক বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ওই দিন বিকালে অজ্ঞাত নামা বৃদ্ধা মহাসড়ক পারাপারের সময় দ্রুতগামী ট্রাক চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরে ৪০৭ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৬ জনের প্রাণহানি: আরএসএফ
তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিলেটের জকিগঞ্জে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী দুই তরুণের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে।
জকিগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের জকিগঞ্জ মানিকপুর ইউপির কলাকুটা বাংলাবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন- জকিগঞ্জ উপজেলা সদর ইউপির সেনাপতিরচক গ্রামের ফয়জুল ইসলামের ছেলে ইমন আহমদ (২৪) এবং মানিকপুর ইউপির দেওয়ানচক গ্রামের আবদুল মানিকের ছেলে মুক্তার হোসেন (২৪)।
এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে শুক্রবার ভোরে ট্রাকসহ চালক ও চালকের সহকারীকে আটক করেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইমন ও মুক্তার মোটরসাইকেলযোগে মানিকপুরের দেওয়ানচকের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে মানিকপুরের বাংলাবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
এ সময় ট্রাকটি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পরে ঘটনাস্থল থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ সময় পুলিশ জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সড়কে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে ট্রাকের সন্ধান করতে থাকে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে সড়কে ৩৭৬ জনের প্রাণহানি: আরএসএফ
একপর্যায়ে জকিগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজার এলাকা দিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশ ট্রাকসহ এর চালক ও সহকারীকে আটক করে।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের সুন্দ্রগাঁও পয়েন্টে কোম্পানীগঞ্জগামী একটি মাইক্রোবাস গাড়ির ধাক্কায় এক পথচারীর মৃত্যু হয়।
নিহত আজির উদ্দিন (৬৫) গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের সুন্দ্রগাঁও গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় সড়ক পার হচ্ছিলেন আজির উদ্দিন। এসময় বেপরোয়া একটি মাইক্রোবাস এসে তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
এতে ঘটনাস্থলেই আজিরের মৃত্যু হয়।
সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপারে ভুক্তভোগী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সড়কে বিপজ্জনক বাঁক, রোড মার্কিংয়ের অভাব, ফিডার রোড (পার্শ্ব রাস্তা) এবং সড়কে সিএনজি অটোরিকশার দাপটে মহাসড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার মূল কারণ।
এ চারটির পাশাপাশি ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গাড়ি চালানো, অতিদ্রুত বা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, গতিসীমা অনুসরণ না করা, মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বা মালামাল বহন করা, রোড সাইন, মার্কিং ও ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে ধারণা না থাকা বা ধারণা থাকলেও তা মেনে না চলা, ওভারটেক, সামনের গাড়ির সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রাখা, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চালানো, চালকের পরিবর্তে হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে গাড়ি চালানো, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না নিয়ে অবসাদগ্রস্ত অবস্থায় একটানা গাড়ি চালানো, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, শিক্ষার স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত ট্রেনিং ও অনভিজ্ঞতাও দুর্ঘটনার কারণ।
আরও পড়ুন: মার্চে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৯ জনের প্রাণহানি