বৃষ্টি ও উজানের ঢল কমে আসায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। একই সঙ্গে নদ-নদীর পানিও কমেছে।
গত দুই দিন রৌদ্রজ্জ্বল থাকায় বন্যার পানি কমেছে সিলেটের উপজেলাগুলোতে।
সিলেট শহরে সুরমা নদীর পানি কমে বর্তমানে বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বাসাবাড়ি থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। কিছু এলাকায় পানি কমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে অনেক পরিবার বাড়িতে চলে গেছেন।
তবে সিলেট শহর এলাকার ড্রেন, ছড়া, খাল পরিষ্কার না থাকা এবং এক ড্রেনের সঙ্গে অন্য ড্রেনের সংযোগ না থাকায় পানি নামছে না। ড্রেনের ময়লা উপরে উঠে এসে ভয়ংকর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। বাসাবাড়িতেও জমে আছে ময়লা পানি।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময়ের পর আর কোনো বৃষ্টি হয়নি। তবে আগামী ৩ দিন সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার (২২ জুন) সকালে সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি অন্যান্য পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে রয়েছে।
সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে শনিবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে শনিবার সকালে বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
শনিবার সকাল ৯টায় কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শুক্রবার এই পয়েন্টে পানি ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তবে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার এই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শনিবার সকাল ৯টায়ও একই মাত্রায় প্রবাহিত হচ্ছিল।
তবে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে গতকালের তুলনায় আরও কমেছে। শনিবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে শুক্রবার এই পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এছাড়া আজ শনিবার লোভা, সারি, ডাউকি, সারিগোয়াইন ও ধলাই নদীর পানি আরও কমেছে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতিতে পানিবন্দি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছেন। বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে সূর্য ওঠায় বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। সরকারি বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের সুরমা, খাসিয়ামারা ও চিলাই নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে কিছু কিছু স্থানে এখনো পানি রয়েছে।
পানি নেমে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
স্থানীয়রা জানান, খাবারের সংকট রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
আরও পড়ুন: বন্যায় বিদ্যুৎহীন সিলেটের ১২ হাজার গ্রাহক
বাজিতপুরের মো. কামাল উদ্দিন বলেন, পানিতে দুই বার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথমবার ক্ষতির পরিমাণ কম হলেও দ্বিতীয়বার সব শেষ হয়ে গেছে। গ্রামের অনেকেরই এখন ঘরে থাকাই বিপজ্জনক হয়ে গেছে।
শ্মশানঘাট এলাকার উৎস রেস্টুরেন্টের মালিক বিশ্বনাথ রায় বলেন, নদীর পানি শুক্রবার থেকে দ্রুত নামতে শুরু করেছে। এতে এ এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।
এদিকে হাওর পাড়ের ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা কাটছে না। শ্রীপুর, পলিরচর, আফছন নগর, ডালার পার ও হাওড় পাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহার নিগার তনু বলেন, পানি কমতে শুরু করলেও দুর্গত মানুষদের ত্রাণ সহায়তা পেতে কোনো সমস্যা হবে না। পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা রয়েছে।
হবিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্ট শেরপুর, মার্কুলী ও আজমিরীগঞ্জ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যায় এ পর্যন্ত ৭৮৩ হেক্টর আউশ ও ১৭৫ হেক্টর শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নোমান হোসেন বলেন, বন্যার পানি কিছুটা কমছে। বন্যায় এ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া এলজিআরডি'র ৫৭ কিলোমিটার পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।
এদিকে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যার্তদের জন্য ২ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫১০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।