ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে সুন্দরবনের বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শুক্রবার (২২ মার্চ) বিকালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শরণখোলা এলাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তার জসিম বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের নিয়ামুলের ছেলে এবং ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদের সমর্থক।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা, ম্যাজিস্ট্রেটের উপর হামলা
জানা যায়, শরণখোলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদ হাওলাদারের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার বিকালে শরণখোলা বাজারে সুন্দরবন বিভাগের স্টাফদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় বন বিভাগের ৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় ৩ জন আহত হন।
আহত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান, ফরেস্টার মতিউর রহমান এবং স্প্রীডবোর্ড চালক সিরাজুল ইসলাম। এদের শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় বন বিভাগের বগী স্টেশন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে শরণখোলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদ হাওলাদারসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৭-৮ জনকে আসামি করে শুক্রবার শরণখোলা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এছাড়া সাইফুল ইসলাম রুবেল, মাকসুদুর রহমান রনি ও আমির হাসান চয়নের নাম উল্লেখ করা হয়। এরা সবাই আসাদের সমর্থক। এদের বাড়ি শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, সুন্দরবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শরণখোলা বাজারে পৌঁছালে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আসাদের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন যুবক তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় ঠেকাতে এসে আরও তিনজন গ্রামবাসী আহত হয়। বন বিভাগের পক্ষ্য থেকে একরাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে দুর্বৃত্তের হামলায় অটোরিকশাচালক নিহত, আহত ভাই-ভাতিজা
তিনি আরও জানান, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ধরতে না দেওয়ায় আসাদ তার লোকজন নিয়ে বন বিভাগের স্টাফদের উপর পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
হামলার পর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি (বর্তমানে কমিটি স্থগীত) আসাদ জানান, দুই বছর ধরে সে সুন্দরবনে মাছ ধরার ব্যবসা করে। বন বিভাগ থেকে সরকারি অনুমতি (পাশ) নিয়ে তার জেলেরা সুন্দরবনে মাছ আহরণ করে। সুন্দরবনের ধানসি এবং দুধরাজ এলাকায় তার জেলেরা মাছ ধরছিল। এসময় অন্য জেলেরা তাদেরকে সেখান থেকে তুলে দিয়েছে। বিষয়টি বন বিভাগের স্টাফদের কাছে জানতে চেয়ে ছিল। এনিয়ে বন বিভাগের স্টাফদের সঙ্গে তাদের কথাকাটাকাটি হয়। তার দাবি, অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও বন বিভাগকে ম্যানেজ করে তার জেলেরা অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ধরে।
শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর হামলা এবং সরকারি কাজে ব্যাধা দেওয়ার অভিযোগে থানা মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এজাহার নামীয় আসামি জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে তাকে বাগেরহাট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মামলার অপর আসামিদের ধরতে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে ডাকাতের হামলায় ২ পুলিশ আহত, গাড়িচাপায় ডাকাতের পা বিচ্ছিন্ন