চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের সাথে হেফাজতে ইসলামের অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন ।
হেফাজত কর্মীরা হাটহাজারী মডেল থানায়, ভূমি অফিসে ও ডাকবাংলোয় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় ভূমি অফিসের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় মাদরাসা ছাত্ররা।
নিহতরা হলেন- হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষার্থী মেরাজুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, জামিল ও স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ।
আরও পড়ুন: মোদিবিরোধী বিক্ষোভ: বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুলিশের সাথে মুসল্লিদের সংঘর্ষ
মেগা উদযাপনে যোগ দিতে ঢাকায় নরেন্দ্র মোদি
শুক্রবার জুমার নামাজের পর নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে হাটহাজারী সদরে মাদরাসা ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সেখান থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জুমার নামাজের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন মাদরাসা ছাত্ররা। এ সময় মাদরাসার মাইক থেকে তাদের মাদরাসায় ফিরে যেতে বলা হলেও তারা মিছিল নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।
পরে মাদরাসার ছাত্ররা থানার সামনে গিয়ে হঠাৎ থানার দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশ মাদরাসা ছাত্রদের ধাওয়া করে। এ সময় পুলিশ ও মাদরাসা ছাত্রদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এক পর্যায়ে হেফাজত কর্মীরা থানা কম্পাউন্ডে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। একই সময়ে মাদরাসা ছাত্ররা হাটহাজারী ভূমি অফিসে হামলা চালিয়ে ভূমি অফিসের একটা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা চালায়। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ হেফাজত কর্মীদের ঠেকাতে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এ সময় পুলিশের গুলিতে নয়জন গুলিবিদ্ধ সহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে চারজনকে চমেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার চারজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হাটহাজারী থেকে গুলিবিদ্ধ নয়জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন।
সংঘর্ষে হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি- রাঙামাটি মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ থানায় হামলা হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।’
আরও পড়ুন: মোদির বাংলাদেশ সফরে সাধারণ মানুষ খুশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মোদি বিরোধী মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ২৫
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হেফাজত অনুসারীরা মিছিল করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তারা হাটহাজারী থানায় প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সংঘর্ষ চলাকালে রাস্তায় পুলিশ অবস্থান নিলে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে অনুসারীরা অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল ছুঁড়ে।’
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন,‘ থানায় হামলার পর হেফাজতের নেতা-কর্মীরা এখানকার ভূমি অফিসে ঢুকেও ভাঙচুর করেছে। তারা ভূমি অফিসের ফাইলপত্র-আসবাবপত্র সব জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ভূমি অফিসের একটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। শুধু ভূমি অফিস নয়, উপজেলার ডাকবাংলোতে ঢুকেও ব্যাপক ভাঙচুর করেছে হেফাজতের কর্মীরা।’