রিয়াল বেতিস, আথলেতিক বিলবাও ও রিয়াল সোসিয়েদাদ—লা লিগার অন্যতম শক্তিধর এই তিন দলের বিপক্ষে একই সপ্তাহে ম্যাচ ছিল যথাক্রমে রিয়াল মাদ্রিদ, আতলেতিকো মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার। রিয়াল মাদ্রিদ এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ার পর সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে আতলেতিকো। এরপর নিজেদের ম্যাচে প্রতিপক্ষ শুরুতেই দশজনের দলে পরিণত হলে কাজ সারতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি কাতালান জায়ান্টদের।

রবিবার কাতালুনিয়ার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ৪-০ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা।

ম্যাচের মিনিট পনেরো পরই লাল কার্ড দেখে সোসিয়েদাদ অধিনায়ক আরিৎস এলুস্তোন্দো মাঠ ছাড়লে ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় দলটি। এরপর ২৫ ও ২৯তম মিনিটে ফুলব্যাক জেরার্দ মার্তিন ও মিডফিল্ডার মার্ক কাসাদোর গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে ৫৬ ও ৬০তম মিনিটে বাকি গোলদুটি করেন রোনাল্দ আরাউহো ও রবের্ট লেভানডোভস্কি।

এই জয়ে ২৬ ম্যাচে ১৮ জয় ও তিন ড্রয়ে ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে ফের টেবিলের শীর্ষস্থান দখর করল হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। সমান ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে দুই নেমে গিয়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। আর ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে তিনে নেমেছে রিয়াল মাদ্রিদ।

আরও পড়ুন: আর্জেন্টাইন স্পাইডারম্যানের গোলে শীর্ষে উঠল আতলেতিকো মাদ্রিদ

এদিন ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় সোসিয়েদাদ। তবে সার্জিও গোমেসের সেই গোল বার্সেলোনার অফসাইড ফাঁদে পড়ে বাতিল হয়ে যায়।

ত্রয়োদশ মিনিটে নিজেদের বক্সের মধ্যে ডিফেন্ডারদের সঙ্গে ওয়ান-টু করার মাঝে ছুটে গিয়ে সোসিয়েদাদ গোলরক্ষককে চেপে ধরেন পেদ্রি, সফলও হন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত বল ক্রসবারের উপর দিয়ে জালের ওপর গিয়ে পড়ে।

ষোড়শ মিনিটে আরও একবার বার্সার ডিফেন্স ভেঙে ভয়চিয়েখ স্টান্সনিকে পরাস্ত করেন ওরি ওস্কারসন, তবে সেবারও অফসাইড ফাঁদ এড়াতে পারেননি তিনি।

এর পরের মিনিটেই পাল্টা আক্রমণে ওঠা দানি অলমোকে পেছন থেকে টেনে ফেলে দিয়ে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন সোসিয়েদাদ ডিফেন্ডার আরিৎস এলুস্তোন্দো। ভিএআর রিভিউতেউ লাল কার্ড বহাল থাকলে দলকে বিপদে ফেলে মাঠ ছাড়েন দলটির অধিনায়ক।

ম্যাচের শুরুর দিকেই দশজনের দলে পরিণত হওয়ার পর সোসিয়েদাদকে একেবারে কোণঠাঁসা করে ফেলে বার্সেলোনা। অনবরত আক্রমণে দলটির রক্ষণভাগকে তটস্থ করে রাখে ফ্লিকের শিষ্যরা। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫তম মিনিটে আলেক্স বালদের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পাওয়া জেরার্দ মার্তিনের গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।

ডান পাশ দিয়ে বল নিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পোনাল্টি স্পটের দিকে ব্যাক-ক্রস দেন লামিন ইয়ামাল। এরপর বল ধরে বাঁ পাশ দিয়ে ছুটে আসা মার্তিনকে লক্ষ্য করে পাস বাড়ান দানি অলমো, আর জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন ২৩ বছর বয়সী এই ফুলব্যাক। বার্সেলোনার জার্সিতে পেশাদার ফুটবলে এটি তার প্রথম গোল।

প্রথম গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মার্ক কাসাদো। ২৮তম মিনিটে বল নিয়ে বক্সে ঢোকার মুখে জোরালো শট নেন অলমো, বল কাসাদোর পায়ে লেগে সামান্য দিক পরিবর্তন করে জালে জড়িয়ে যায়। ফলে গোলের কারিগর অলমো হলেও শেষ ছোঁয়ার কারণে দ্বিতীয় গোলদাতা হিসেবে লেখা হয় কাসাদোর নাম, আর দুটি অ্যাসিস্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় অলমোর।

এতে করে অবশ্য চলতি মৌসুমে দশবার ম্যাচ শুরু করে দশ গোলে অবদান (৫ গোল ও ৫ অ্যাসিস্ট) রাখলেন লাইপসিগ থেকে এ মৌসুমে বার্সায় নাম লেখানো অলমো।

এছাড়া চলতি মৌসুমে বার্সেলোনার ১৯ জন পৃথক খেলোয়াড় গোল করার কৃতিত্ব গড়ল, ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে যা কোনো দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক খেলোয়াড়ের গোল করার রেকর্ড। ২০ খেলোয়াড়ের গোল নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে গতরাতে রিয়াল মাদ্রিদকে বিধ্বস্ত করা রিয়াল বেতিস। এছাড়া প্রিমিয়ার লিগ থেকে এখন পর্যন্ত ১৯ খেলোয়াড়ের গোল করার রেকর্ড আছে আর্সেনালেরও।

অধিনায়কের বিদায় এবং স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুই গোল খেয়ে চোখে সর্ষের ফুল দেখতে শুরু করে ইমানোলের শিষ্যরা। এ সময় থেকে দলটির খেলোয়াড়দের নিয়ে একপ্রকার ছেলেখেলা শুরু করে বার্সেলোনা। এর মাঝে আসে আরও কয়েকটি সুযোগ, তবে বিপদ আর বাড়তে না দিয়ে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় সোসিয়েদাদ।

দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য একটি পরিবর্তন করে দল মাঠে নামান সোসিয়েদাদ কোচ ইমানোল, তবে শুরু থেকেই চাপ অব্যাহত রাখে বার্সেলোনা। এর ধারাবাহিকতায় ৪৯তম মিনিটে প্রতিপেক্ষর বক্সের কিছুটা বাইরে থেকে রাফিনিয়ার নেওয়া ফ্রি কিক অল্পের জন্য ডান পাশের পোস্টঘেঁষে বেরিয়ে যায়।

৫৫তম মিনেটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া পেদ্রির শট পোস্টে লেগে বাইরে বেরিয়ে যায়। তবে পরের মিনিটে পাওয়া কর্নার থেকে ব্যবধান বাড়ান রোনাল্দ আরাউহো।

রাফিনিয়ার পাঠানো চমৎকার এক ক্রসে লাফিয়ে উঠে দুর্দান্ত হেডারে লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করেন রবের্ট লেভানডোভস্কি, তবে আরও অসাধারণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে তা ঠেকিয়ে দিলে ফিরতি বল এসে পড়ে গোলমুখে থাকা আরাউহোর সামনে। এরপর তার জাল-বিদীর্ণ করা শটটি নেওয়া ছিল শুধু মুহূর্তের অপেক্ষা।

পাঁচ মিনিট পর লেভানডোভস্কির মনোমুগ্ধকর দক্ষতায় চতুর্থ গোলটি পেয়ে যায় কাতালানরা। এবার তার গোলের কারিগর কিছুক্ষণ আগে তারই বানিয়ে দেওয়া সুযোগ থেকে গোল আদায় করা আরাউহো।

সতীর্থর পাস ধরে প্রতিপক্ষের বক্সের কিছুটা সামনে থেকে সোসিয়েদাদের জমাট রক্ষণ চিরে বুলেট শট হানেন বার্সার এই উরুগুয়ে ডিফেন্ডার। এরপর ওই শটেই দর্শনীয়ভাবে পা ছুঁইয়ে বলের গতিপথ বদলে দেন বক্সের ভেতরে থাকা লেভা। ফলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষকের।

আরও পড়ুন: রিয়ালকে হারিয়ে বিপদ বাড়িয়ে দিল বেতিস

এ নিয়ে চলতি মৌসুমে লা লিগায় নিজের গোলের ট্যালি আরও বাড়িয়ে নিলেন লেভানডোভস্কি (২১টি)। ১৭ গোল নিয়ে তার পরই অবস্থান করছেন রিয়াল মাদ্রিদের কিলিয়ান এমবাপ্পে।

এছাড়া সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৭ ম্যাচে ৩৪ গোল করলেন বার্সার পোলিশ স্ট্রাইকার, ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে কোনো খেলোয়াড়ের যা সর্বোচ্চ।

এরপরও আক্রমণ অব্যাহত রাখে বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা, কিন্তু আর মেলেনি সাফল্য। ফলে ৪-০ গোলেই শেষ হয় ম্যাচ।

এর ফলে কোপা দেল রের ম্যাচে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪-৪ গোলে হতাশাজনক ড্রয়ের পর লিগে দারুণ এক জয় তুলে নিলে ফ্লিকের দল। আগামী বুধবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর ম্যাচে বেনফিকার বিপক্ষে মাঠে নামবে বার্সেলোনা। তারপর লা লিগায় তাদের পরবর্তী ম্যাচ ওসাসুনার বিপক্ষে।

অন্যদিকে, হেরে ২৬ ম্যাচে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের নবম স্থানেই রইল রিয়াল সোসিয়েদাদ। ইউরোপা লিগে বৃহস্পতিবার রাতে তারা খেলবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে। এরপর লা লিগায় সেভিয়াকে আতিথ্য দেবে ইমানোলের দল।