টি-টোয়েন্টিতে ১৬০ রানের লক্ষ্য খুব বেশি বড় না হলেও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ২৫ রানের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে শেষ আটে ওঠার দৌড়ে ডাচদের পেছনে ফেলে এক ধাপ এগিয়ে গেল টাইগাররা।
বৃহস্পতিবার কিংসটাউনের আরনোস ভেল ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করে পাঁচ উইকেটে ১৫৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে আট উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রানে থামে নেদারল্যান্ডসের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে রিশাদ হোসেন সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন। এর মধ্যে পঞ্চদশ ওভারে তার জোড়া উইকেটই ম্যাচের মোড় বাংলাদেশের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। এছাড়া তাসকিন দুটি এবং মুস্তাফিজ, তানজিম সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ পেয়েছেন একটি করে উইকেট।
ডাচদের হয়ে সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট ৩৩, বিক্রমজিত সিং ২৬ ও স্কট এডওয়ার্ডস ২৫ রান করেন।
অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংসটির জন্য ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন সাকিব আল হাসান।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে টিকিয়ে রেখে সুপার এইটে ভারত
এদিন দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ কয়েকবার ম্যাচের মোড় ঘুরে যেতে দেখা যায়। শুরুতে ডাচদের পক্ষে তো কয়েক ওভার পর টাইগারদের দিকে। আবার মাঝে ডাচরা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তো স্লগ ওভারে বাংলাদেশি বোলাররা ঝলক দেখিয়েছেন।
১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সাবধানী শুরু করে নেদারল্যান্ডস। তবে পঞ্চম ওভারে দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন তাসকিন। ওভারের দ্বিতীয় বলটি বাউন্সার দেন তিনি। মাইকেল লেভিট বলটি সুইপ করতে গেলে উপরে উঠে যায়, আর পয়েন্ট অঞ্চল থেকে তা তালুবন্দি করেন তৌহিদ। এক ছক্কা ও দুটি চারে ১৬ বলে ১৮ রান করা লেভিট ফিরলে দলীয় ২২ রানে প্রথম উইকেট হারায় ডাচরা।
পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে অপর ওপেনার ম্যাক্স ওডাউডকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে দেন তানজিম সাকিব। এরপর ডাচদের রানের পালে হাওয়া দেন বিক্রমজিত সিং ও এঙ্গেলব্রেখট। কিন্তু দশম ওভারে বিক্রমজিত আউট হয়ে যান। ৩ ছক্কার সাহায্যে ১৬ বলে ২৬ করে তিনি যখন বিদায় নিচ্ছেন, তখন স্কোর ৯.৩ ওভারে ৬৯/৩।
এরপর অধিনায়ক এডওয়ার্ডস এসেও রানের চাকা সচল রাখেন।
বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ এবং বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ নিউ ইয়র্কের স্লো উইকেটে খেলা বাংলাদেশি বোলারদের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল; মাঠের খেলা থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, সিঙ্গেলস, ডাবলস, বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারিতে রানরেট বাড়িয়েই চলেছিলেন এঙ্গেলব্রেখট ও এডওয়ার্ডস। কয়েক ওভারের মধ্যেই ম্যাচটি একপেশে করে ফেলার ইঙ্গিত দেন এই দুই ব্যাটার।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের হারে ‘আইসিসির আইনকে’ কাঠগড়ায় তুললেন বিশ্লেষকরা
তবে পঞ্চদশ ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে দলকে পথ দেখান রিশাদ। ওই ওভারের চতুর্থ বলে এঙ্গেলব্রেখটকে ক্যাচ নেন তানজিম সাকিব এবং শেষ বলে নতুন ব্যাটার বাস ডি লিডকে স্ট্যাম্পিং করে দেন লিটন দাস। লিটনের স্ট্যাম্পিংটি ছিল দর্শনীয়।
এর ফলে ১১১ রানে চতুর্থ ও পঞ্চম উইকেট হারিয়ে বেকায়দায় পড়ে যায় নেদারল্যান্ডস। কারণ পাঁচজন বোলার নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন স্কট এডওয়ার্ডস। অলরাউন্ডার না থাকায় বাংলাদেশি বোলারদের সামনে আর দাঁড়াতেই পারেননি পরবর্তী ব্যাটাররা।
ছয় রানের ব্যবধানে ১৭তম ওভারের প্রথম বলে স্কট এডওয়ার্ডসের উইকেটটিও তুলে নেন মুস্তাফিজুর। মূলত চাপে পড়েই মেরে খেলতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে যান নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক। পরের ওভারের প্রথম বলে ভ্যান বিককে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন রিশাদ। ফলে ১১৭ রানে ষষ্ঠ ও সপ্তম উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস।
এরপর আরিয়ান দত্ত উইকেটে এসে কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি। শেষ ওভারে নেদারল্যান্ডসের দরকার ছিল ৩৩ রান। আরিয়ানের এক চারে ওই ওভারে ৭ রান সংগ্রহ করে ডাচরা। শেষ বলে টিম প্রিঙ্গলকে বোল্ড করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাঠ ছাড়েন তাসকিন-শান্তরা।
এ জয়ের ফলে তিন ম্যাচের দুটি জিতে চার পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থান পোক্ত করল বাংলাদেশ। তিনটি করে ম্যাচ খেলে নেদারল্যান্ডসের পয়েন্ট ২ এবং শ্রীলঙ্কার ১। অন্যদিকে, দুই ম্যাচ হেরে নেপাল এখনও কোনো পয়েন্ট অর্জন করতে পারেনি।
বাংলাদেশের জয়ে ‘ডি’ গ্রুপের প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
আগামী সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায় নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। তার এক ঘণ্টা পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নামবে নেদারল্যান্ডস। সোমবারের ম্যাচে জয় পেলেই টাইগারদের সুপার এইটে খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে।