দুঃসময়ের চক্র থেকে যেন বেরই হতে পারছে না গত কয়েক মৌসুম ধরে ইউরোপীয় ফুটবলে প্রতাপ দেখানো ম্যানচেস্টার সিটি। সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইউভেন্তুসের কাছেও বিধ্বস্ত হয়েছে পেপ গার্দিওলার দল।
তুরিনের আলিয়ান্স স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ষষ্ঠ রাউন্ডের ম্যাচে গত রাতে সিটিকে ২-০ গোলে হারিয়েছে ইউভেন্তুস। ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে আধিপত্য বিস্তার করলেও আক্রমণ ও গোলের সুযোগ তৈরিতে সিটির খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি ফিনিশিংয়ের অভাবে প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে গিয়ে বারবার খেই হারিয়েছে তারা।
তবে এত কিছুর পরও শিষ্যদের মাঝে কোনো ত্রুটি দেখতে পাচ্ছেন না সিটি বস গার্দিওলা। বরং দলের প্রচেষ্টার প্রশংসা করলেন এই স্প্যানিশ কোচ।
‘আমরা ভালো খেলেছি, সত্যিই ভালো খেলেছি। তবে (ফিনিশিংয়ে) শেষ পাসটি আমরা ঠিকঠাক দিতে পারিনি। এই কাজটি আমরা ভালোভাবে করতে পারিনি। তবে ছেলেদের নিয়ে আমি গর্বিত। ওরা সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে; চেষ্টার কমতি রাখেনি।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা এই বাস্তবতায় আছি। আশা করি, সামনে (পরিস্থিতি) বদলে ফেলতে পারব এবং প্রত্যাশিত ফলও পাব। জানি, কাজটা কঠিন। ইউরোপে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লড়াইটা আরও কঠিন। তবে, আমরা আসলেই ভালো খেলেছি।’
কোচের এমন প্রশংসার পরও দলের পারফরম্যান্স নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন সিটি অধিনায়ক ইলকাই গুন্ডোগান।
ম্যাচ শেষে টিএনটি স্পোর্টসকে তিনি বলেন, ‘ওদের প্রতিটি আক্রমণই ছিল ভয়ঙ্কর। ওয়ান-অন-ওয়ানেও আমরা খামখেয়ালি ছিলাম, ফলে সহজ ম্যাচটি নিজেরাই জটিল করে ফেলেছি।’
আরও পড়ুন: ক্যারাবাও কাপ: এক রাতে বিদায় সিটি, ভিলা ও চেলসির
সতীর্থদের আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণেই মাঠের পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ছে জানিয়ে এই জার্মান বলেন, ‘(ভালো খেলতে) আত্মবিশ্বাস খুব গুরুত্বপূর্ণ, এটি (আমাদের) মানসিক সমস্যা। একবার আমরা বলের নিয়ন্ত্রণ হারালে কিংবা ভুল পাস দিলে তারপর থেকে দিতেই থাকি। ফলে আমাদের ছন্দহীন করতে প্রতিপক্ষের বেশিকিছু করা লাগে না।’
‘আত্মবিশ্বাস ফেরাতে আমাদের আবারও সহজ ফুটবলে মনোযোগ দিতে হবে। দলের প্রতি আরও নিবেদন কীভাবে দেওয়া যায়, তার জন্য প্রত্যেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলা দরকার।’
গুন্ডোগানের এমন মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি একদমই মানতে নারাজ বলে জানান গার্দিওলা। তিনি বলেন, ‘না না। বিষয়টি বরং একেবারেই উল্টো। আজকে আমরা সত্যিই ভালো খেলেছি, খুব খুব ভালো খেলেছি।’
‘ইতালিয়ান দলের বিপক্ষে খেলা সবসময়ই কঠিন। এই ধরনের পরিস্থিতি সামলাতে ওরা ওস্তাদ। মাঠে আমরা নিজেদের সবটা দিয়েছি। হ্যাঁ, কিছু ভুলত্রুটি ছিল বটে, তবে ছেলেদের নিয়ে আমি গর্বিত।’
চোটের কারণে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হারানোয় ভালোভাবে চলতি মৌসুম শুরু করলেও সম্প্রতি খেই হারিয়েছে সিটি। কমিউনিটি শিল্ড জিতে মৌসুম শুরু করে গত ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সব মিলিয়ে টানা ১৪ ম্যাচ অপরাজিত ছিল গার্দিওলার শিষ্যরা। প্রিমিয়ার লিগ টেবিলেও বেশ কয়েক পয়েন্টের ব্যবধানে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিল তারা। তবে তারপর থেকেই নিজেদের খুঁজে চলেছে টানা চারবার প্রিমিয়ার লিগ জিতে রেকর্ড গড়া বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়নরা।
আরও পড়ুন: অবশেষ জয়যাত্রা থামল সিটির
৩১ অক্টোবর থেকে টানা পাঁচ ম্যাচ হারা সিটি সবশেষ দশ ম্যাচে মাত্র একবার জয়ের দেখা পেয়েছে, আর ড্র করেছে মাত্র দুটি ম্যাচে। বাকি সাতটি ম্যাচই হেরেছে ম্যানচেস্টারের নীল জার্সিধারীরা।
টানা ছন্দপতনে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষস্থান থেকে চতুর্থ স্থানে নেমে গেছে ক্লাবটি। পাশাপাশি, চূড়ায় থাকা লিভারপুলের সঙ্গে তাদের পয়েন্ট ব্যবধান বেড়ে হয়েছে ৮। ক্যারাবাও কাপের চতুর্থ রাউন্ড থেকে বাদ তো পড়েছেই, এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে তাদের।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ৬ ম্যাচে দুটি করে জয় ও ড্রয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ২২তম অবস্থানে রয়েছে ২০২৩ সালের চ্যাম্পিয়নরা, যা সরাসরি বাদ পড়ার তালিকা থেকে মাত্র এক পয়েন্ট দূরে। এমতাবস্থায় অবশিষ্ট দুই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই তাদের।
আগামী ২২ জানুয়ারি পিএসজি ও ২৯ জানুয়ারি ক্লাব ব্রুজের মুখোমুখি হবে সিটিজেনরা। শক্ত এই দুই প্রতিপক্ষের বাধা অতিক্রম করতে পারলেই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে প্লে-অফে খেলার স্বপ্ন বেঁচে থাকবে তাদের।
আরও পড়ুন: সিটিই শেষ ক্লাব, জানিয়ে দিলেন গার্দিওলা