পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।
তিনি বলেন, ‘এগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলবিষয়ক কর্মসূচিতে আমাদের সহযোগিতা করতে চায়।’
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতারের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক কোনো আলাপ হয়নি। টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিশ্বজুড়ে যেসব বিষয় নিয়ে তাদের উদ্বেগ আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
সুনির্দিষ্টভাবে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। পাঁচ বছর ধরে এই সরকার থাকবে। কাজেই আগামী দিনে তাদের যেসব কর্মসূচি আছে, যেসব জায়গায় তারা আমাদের সহযোগিতা করতে চান, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী, জলবায়ু আমরা কীভাবে দেখছি, এ সম্পর্কে তারা একটা ধারণা চেয়েছেন।’
আরও পড়ুন: অস্তিত্ব রক্ষায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, তারা যখন তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবেন, আমাদের চাহিদাগুলো তারা মাথায় রাখবেন।
সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য মার্কিন প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফর কি না- ‘প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই। আমি মনে করি আমাদের সম্পর্ক উন্নত আছেই। আগামীতে সেটা আরও কীভাবে জোরালো করা যায়, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তার আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন, সে জন্যই তারা এখানে এসেছে।’
সাবের হোসেন বলেন, ‘যখন দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের কথা বলব, সেখানে অনেকগুলো দিক থাকবে। কিছু কিছু দিক থাকে, যেখানে তারা একটু বেশি জোর দেবে। আমি মনে করি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, এটা তাদের একটা অগ্রাধিকারমূলক বিষয়। তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। এটার ওপর ভর করে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগামী দিনে আরও জোরালো হবে।’
জলবায়ু সংকট নিয়ে তারা কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন তো প্রতিদিনই চ্যালেঞ্জ। আমরা বাংলাদেশেও এটার প্রভাব দেখছি। এটা যে একটা জরুরি বিষয়, তা তারা উপলব্ধি করেন। বাংলাদেশ যেভাবে বিগত বছরগুলোতে এগিয়ে গেছে, সেটা ধরে রাখতে গেলে এই উন্নয়নের একটা স্থায়িত্ব থাকা প্রয়োজন। এটা টেকসই হতে হবে।
‘টেকসই হতে হলে পরিবেশবান্ধব হতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেটা আমরা দিচ্ছি। তারা মনে করেন, বাংলাদেশ শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার কিংবা ক্ষতিগ্রস্তই নয়, জলবায়ু পরবর্তনের অনেক সমাধানও বাংলাদেশে আছে। তারা একটা রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে দেখে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন অ্যাডাপটেশনের (অভিযোজন) কথা বলি, তারা আমাদের কাছ থেকেও অনেক কিছু জানতে পারবে। অনেক কিছু তাদের দেশেও কাজে লাগাতে হবে।’
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় জাতীয় বন জরিপের উদ্বোধন করলেন পরিবেশমন্ত্রী
অর্থায়ন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা এখন কথা বলেছি তাদের নতুন কর্মসূচি ও বাংলাদেশ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা নিয়ে। তাতে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের আলোকে সেই চাহিদা পূরণে কীভাবে তারা সহযোগিতা করবে, সেটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি।’
তবে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে জানান মন্ত্রী। এছাড়া সোলার ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে দুপক্ষের আলাপ হয়েছে। সেখানে মার্কিন প্রযুক্তি নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি, সেটা চাহিদার চেয়ে বেশি। কাজেই আমরা যখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বলব, সেখানে আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করব, সেটা যাতে আধুনিক প্রযুক্তি হয়। আমরা লিপ ফ্রগ (উল্লম্ফন) করতে চাই। আমরা ধাপে ধাপে না, একবার যদি কয়েকটা ধাপ উপরে চলে যেতে পারি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, সেই কাজটা আমরা করছি।’
পোশাক খাতের পরিবেশ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে ১৫ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠন নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা যেটা বলেছি, ‘আমরা নতুন একটা প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাচ্ছি। সেখানে আমাদের সব উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তা করতে পারবেন। আমি আশাবাদী, আমেরিকাও থাকবে।’
পরিবশেমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ থেকে আমরা টাকার বিষয়ে কোনো চাচ্ছি না, আমাদের পরিকল্পনা একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করব, যেখানে সবাই থাকবেন। আমাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে দেখা যাবে, একাধিক উন্নয়ন সহযোগী একই বিষয়ে সহযোগতিা করছেন। আমরা সেটা চাই না।’
আরও পড়ুন: পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট তৈরিতে প্রণোদনা দিতে বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করবে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী