গত ২৮-২৯ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের 'নৃশংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের' কথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরে সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় টিকিয়ে রাখতে 'দৃঢ় ও অটল' অবস্থানের কথা জানিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে যথাসময়ে 'অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য' নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কূটনীতিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, প্রত্যেক মানুষের জীবনই গুরুত্বপূর্ণ- আমাদের বিএনপির বন্ধুরা তা বুঝুক বা না বুঝুক। আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরব এবং সংযত থাকব।’
ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান, জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনগত মানদণ্ডের মধ্যে সবকিছু করতে হবে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস, দেশকে অস্থিতিশীল করা বা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়াগুলোর ক্ষতি করার যেকোনো প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে হবে।
ড. মোমেন বলেন, জাতিকে আতঙ্কিত করা এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা এবং অসাংবিধানিক শক্তিকে উৎসাহিত করা। তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভয় দেখানো ও কূটচালের কৌশল আগেও কার্যকর হয়নি, এখনও হবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে এবং এটি 'অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ' হবে।
তিনি বলেন, 'কে আসবে, কে আসবে না সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানে জনগণের অংশগ্রহণ। জনগণের অংশগ্রহণ থাকলে তা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।’
আরও পড়ুন: 'মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা' দাবি করা ব্যক্তিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা উচিত: মোমেন
আইনমন্ত্রী বলেন, কূটনীতিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হলেও তারা কোনো প্রশ্ন করেননি।
তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি যে আমরা যে ব্যাখ্যা দিয়েছি তা স্পষ্ট ছিল। তারা সন্তুষ্ট কি না, তা বলা তাদের দায়িত্ব।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অবশ্যই সাংবিধানিক পথ অনুসরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ২৮ ও ২৯ অক্টোবর যা ঘটেছিল তার একটি লিখিত সংস্করণসহ হত্যা, পুলিশ ও সাংবাদিকদের উপর হামলা এবং প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলাসহ অন্যান্য ঘটনার ভিডিও ফুটেজ এবং স্থির চিত্রের সংকলন তাদের দিয়েছেন।
ব্রিফিংয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকায় অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনগুলো অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে 'সংযম, সহিংসতা পরিহার ও একযোগে কাজ' করার জন্য সব স্টেকহোল্ডারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
দুই দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, 'অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক সমাবেশের সময় রাজনৈতিক সহিংসতায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
কূটনীতিকদের উদ্দেশে মোমেন বলেন, 'গত ২৮ অক্টোবর ও গতকাল যা ঘটেছে তাতে আমরা মর্মাহত। তবে আমরা বিস্মিত নই, কারণ আমরা অতীতে বিএনপি-জামায়াতের ভয়াবহ সহিংসতার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।’ তিনি আরও বলেন, বিএনপি ও তার মিত্রদের সহিংসতা ও আগ্রাসনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
২০০০ সালের গোড়ার দিকে বিএনপি-জামায়াত সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের পরিবেশ তৈরি করেছিল। বিশেষ করে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় ব্যাপক সহিংসতা ও ভোট কারচুপির মতো ঘটনা ঘটিয়েছিল।
নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা লুটপাট, ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। তাদের লক্ষ্য ছিল বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
আরও পড়ুন: চ্যালেঞ্জ নিতে চাই এবং মোকাবিলা করতে প্রস্তুত: মোমেন
২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে বিএনপি ও তার মিত্ররা কয়েক হাজার গাড়ি ভাঙচুর করে এবং পেট্রোলবোমা ব্যবহার করে অনেক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। গাড়ির ভেতরে আটকে থাকা যাত্রীদের জীবন্ত পুড়িয়েও মেরেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও ভয়াবহ ক্ষত ও ট্রমা নিয়ে বেঁচে আছেন।
সে সময় পেট্রোলবোমা ও হ্যান্ড গ্রেনেড হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ কর্মকর্তাসহ চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়।