অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য প্রত্যাহার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুর সোয়া ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক-সংলগ্ন মূল ফটকের (ডেইরি গেইট) সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব ও জাবি শিক্ষার্থী জিয়াউদ্দিন আয়ানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা তীব্র আন্দোলন করে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ লেগে আছে খুনি হাসিনার হাতে। কেউ যদি তাকে পুনর্বাসনের ন্যূনতম প্রচেষ্টা চালায় তাহলে ছাত্র-জনতা তাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে যে আওয়ামী লীগকে মাইনাস করা হয়েছে, তাদের যদি কেউ পুনর্বাসনের চেষ্টা চালায় তাহলে তাদেরও মাইনাস করা হবে।
মিছিলে শিক্ষার্থীদের, ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘হাসিনার দোসরেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর, করতে হবে করতে হবে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুঁখে দাও দিতে হবে’, ‘ভারতীয় প্রেসক্রিপশন, এই বাংলায় চলবে না’—স্লোগান দিতে শোনা যায়।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মধ্যরাতে ঢাবিতে মিছিল
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘আমরা দেখেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করতে পারে নাই। ৫ আগস্টের পর কোনো যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য আমাদের আবারও রাজপথে নামতে হবে—এটা আমরা কল্পনায়ও ভাবি নাই।’
‘আমরা দেখেছি, গতকাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। এই বক্তব্যকে আমরা প্রত্যাখান করছি সেইসঙ্গে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকার বা অন্য কেউ যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ন্যূনতম প্রচেষ্টা চালায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’
গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘স্বৈরাচারী পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি গত জুলাই বিপ্লবে হাজার হাজার ছাত্রজনতার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এখনও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে হাসপাতালের বেডে জীবন কাটাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি এসব দেখছে না? তাদের কি চোখে পড়ে না? এত কিছুর পরেও তারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালায় কার হুকুমে?’
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, পার্শ্ববর্তী দেশের কোনো প্রেসক্রিপশন যদি এদেশে বাস্তবায়নের কোনো অপচেষ্টা চালানো হয়, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেব।’
বাগছাসের কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক ও জাবি শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘সংগ্রামী ছাত্র-জনতা আপনারা দেখেছেন, ৩৬ দিনের দীর্ঘ আন্দোলন শেষে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের রায় দিয়েছে। স্বৈরাচারী আওয়ামী শক্তি দীর্ঘ ১৭ বছর বাংলাদেশকে একটি আবদ্ধ কারাগারে পরিণত করেছিল, কিন্তু এদেশের জনগণ পরাধীনতার শিকল ভেঙে দিয়ে খুনি হাসিনাকে লাল কার্ড দেখিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি দিল্লি থেকে বা অন্য কোথাও থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসে এদেশকে চালাতে চায় তাহলে তারা ভুল করবে। বাংলাদেশ কীভাবে চলবে, তা ঠিক করবে এদেশের ছাত্র-জনতা। আমরা আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের যেকোনো অপচেষ্টা রুঁখে দিতে রাজপথে সর্বদা তৎপর থাকব।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাভার প্রতিনিধি জুলকারনাইন বলেন, ‘আমরা রক্ত দিতে শিখে গেছি। কীভাবে দাবি আদায় করতে হয়, তাও শিখে গেছি আমরা। কেউ যদি আমাদের চোখ রাঙায়, তাদের পাল্টা জবার দেওয়ার ভাষা আমাদের জানা আছে।’
তিনি বলেন, ‘সামরিক-বেসামরিক কোনো শক্তি যদি খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালায়, তাহলে ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল শক্তিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করা হবে।’
গতকাল (বৃহস্পতিবার) ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই।
এরপর গভীর রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চালের মূখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ সংক্রান্ত একটি ফেসবুক স্টাটাস দিলে, সেটি কেন্দ্র করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।