রবিবার প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই নির্বাচনে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ১৮০০ এর বেশি প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছে।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকদের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতি ও কেন্দ্র দখলসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৪৯ জনসহ মোট ৫৭ প্রার্থী রবিবারের নির্বাচন বর্জন করেন। তাদের প্রায় সবাই ভোটের মাঝখানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, বিভিন্ন অভিযোগে ২২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
২৯৯টি আসনের নির্বাচনে ২৯৮টির বেসরকারি ফল পাওয়া গেছে।
সোমবার ভোর ৪টার দিকে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের ঘোষণা অনুযায়ী, মহাজোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৯, জাতীয় পার্টি ২০, বিএনপি ৫, গণফোরাম ২, বিকল্পধারা ২, জাসদ (ইনু) ২, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩, তরিকত ফেডারেশন ১, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ১ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসনে বিজয়ী হয়েছে।
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন দুই লাখ ২৯ হাজার ৫৩৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এসএম জিলানী পেয়েছেন মাত্র ১২৩ ভোট।
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে ১০৭ কেন্দ্রের বেসরকারি চূড়ান্ত ফলাফলে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৬ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত সাইফুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ২৪ হাজার ৫৩ ভোট পেয়েছেন।
মহাজোট সঙ্গী জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদকে রংপুর-৩ আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। এরশাদ পেয়েছেন এক লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রিটা রহমান পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট।
জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আড়াই লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে নড়াইল-২ আসনে জয় পেয়েছেন। বেসরকারি ফল অনুসারে নৌকার প্রার্থী মাশরাফি পেয়েছেন দুই লাখ ৭৪ হাজার ৪১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী এজেডএম ফরিদুজ্জামান পেয়েছেন মাত্র আট হাজার ৬ ভোট।
গোপালগঞ্জ ২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলুল করিম সেলিম নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ৮১ হাজার ৯০৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের তসলিম সিকদার হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৬০৮ ভোট। এছাড়া বিএনপি প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ২৮৬ ভোট।
গোপালগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান নৌকা প্রতীক নিয়ে ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৪২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মিজানুর রহমান হাতপাখা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৭০২ ভোট। বিএনপির এফ.ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৫৭ ভোট।
কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নৌকা প্রতীক নিয়ে ২ লাখ ৬০ হাজার ৯৭৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুজিবুল হক চুন্নু ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫১৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজের এলাকা ঠাকুরগাঁও-১ আসনে হেরে গেছেন। তবে তিনি বগুড়া-৬ আসনে খালেদা জিয়ার পরিবর্তে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ২ লাখ পাঁচ হাজার ৯৮৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৯৬১ ভোট।
রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মারা যাওয়ায় গাইবান্ধা-৩ আসনে নির্বাচন স্থগিত ছিল।
নির্বাচনী সহিংসতায় নোয়াখালী, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, নাটোর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, গাজীপুর, সিলেট ও যশোর জেলায় আনসার সদস্যসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।