প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (১৬ অক্টোবর) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আগামী সাধারণ নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য তার দল জয়ী হলে রাষ্ট্র পরিচালিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালকে অত্যাধুনিক সুবিধা দিয়ে উন্নীত করা হবে।
পানিসম্পদ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ আগামীতে সুযোগ পেলে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালকে উন্নত করব।
তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি কর্মসূচিতে যোগ দেন।
আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ডাক্তার, নার্স ও দক্ষ জনবল দরকার; আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য আলাদা তহবিল বরাদ্দ করেছি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য সরকার বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, ঢামেক হাসপাতালকে ৪০০০-৫০০০ শয্যার অতি আধুনিক হাসপাতালে উন্নীত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
আরও পড়ুন: উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে নদী-খালের ক্ষতি করা যাবে না: প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, বর্তমান মেয়াদে সরকার এটা করতে পারত।
তিনি বলেন, ‘...কিন্তু করোনা মহামারি এবং ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য ব্যয় এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিশাল ব্যয়ের কারণে আমরা এটা করতে পারিনি।’
তিনি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় টিকাদান কর্মসূচির জন্য ভ্যাকসিন আনার জন্য সরকারের বিভিন্ন ব্যয় সংক্ষেপে বর্ণনা করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলাম, যদিও বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষ এতে মারা গিয়েছিল, যার মধ্যে অনেক ধনীও ছিল। কিন্তু, এই লক্ষ্যে আমাদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ৩২ শয্যার প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালকে ৫০ শয্যার এবং ১০০ শয্যার জেলা হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করেছেন এবং বড় জেলা হাসপাতালগুলোকে ৫০০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করেছে।
তিনি বলেন, তারা তাদের আবাসনের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করার পাশাপাশি ৪০ হাজার নার্স এবং ২২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলো যাতে কোনও অবহেলার শিকার না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা ব্যবস্থা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিটি দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তারা সারাদেশে কমিউনিটি হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন। কমিউনিটি সেন্টারগুলো বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ বিতরণ করছে।
তিনি বলেন, সুবিধাগুলো বাংলাদেশে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করছে।
তিনি বলেন, ক্লিনিকগুলো স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরও ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াত সরকার যারা সেগুলোতে কাজ করছেন এবং তাদের কাছ থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন; তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলে দাবি করে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ তারা (ইমিউনিটি ক্লিনিক) রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে সকলের সেবা দেয়।
আরও পড়ুন: যেকোনো মূল্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট জনগণের কল্যাণের কথা ভাবে না, বরং নিজেদের ভাগ্য তৈরিতে ব্যস্ত। তাদের মানসিকতা সংকীর্ণ।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহেদ ফারুক।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর দুটি পৃথক ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারাদেশের প্রতিটি উপজেলায় সুবিধা স্থাপনের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা চতুর্থ ধাপে ২৮টি জেলার ৬৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কার্যত ‘৬৫টি কমিউনিটি চক্ষু কেন্দ্র’ উদ্বোধন করেন।
একই কর্মসূচি থেকে তিনি ৮০টি উন্নত স্কিম ও ৪৩০টি ছোট নদী, খাল ও জলাশয়ের পুনঃখনন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০টি নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
যশোরের শার্শা উপজেলা, পাবনার সাথিয়া উপজেলা এবং মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিল।
প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ বছরে বাস্তবায়িত উন্নয়ন পরিকল্পনা সমন্বিত ‘জয়যাত্রা’ শিরোনামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
পরে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই: প্রধানমন্ত্রী