অমর একুশ, ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।
মহান ভাষা আন্দোলন জাতির ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যার লক্ষ্য ছিল মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজস্ব-সত্তা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করা।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম রবিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী রবিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে মিনিটে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আরও পড়ুন: শহীদ মিনারে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি অর্জনের জন্য প্রাণ দিয়েছেন যারা তাদের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন দেশের আপামর জনতা।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। এ সময় পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে উর্দু চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ঢাকার ছাত্র ও সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসেন।
১৯৫২ সালের আজকের এই দিনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও কয়েকজন বীর সন্তান নিহত হন।
ভাষা আন্দোলনের রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে জাতি স্বাধীনতা অর্জন করে।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালিত হয়।
আরও পড়ুন: প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষাকে এগিয়ে নিতে কন্টেন্টের মান নিশ্চিত করতে হবে: মোস্তাফা জব্বার
আজকে দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
অন্যদিকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ছায়ানটসহ অন্যান্য সংগঠন দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও স্টেশন ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
বিকাল ৪টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিশেষ বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক মেসবাহ কামাল।
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিল্পীরা আবৃত্তি পরিবেশন করবেন এবং অনুষ্ঠানটিতে গারো কালচারাল একাডেমির গানের পরিবেশনা এবং আদিবাসী নৃত্যদল কালারস অফ হিল-এর নৃত্য আবৃত্তিও পরিবেশিত হবে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শিল্পকলা একাডেমি তার জাতীয় নাট্যশালায় ‘বিশ্বের সব দেশে মাতৃভাষা রক্ষা করবে বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অংশগ্রহণ থাকবে।
আরও পড়ুন: মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ কেন জরুরি?
দেশের স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট রাত ৮টায় ফেসবুক ও ইউটিউবে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ফাগুন মাসের আগুন’ সম্প্রচার করবে। যেখানে গান, আবৃত্তি ও একটি বিশেষ তথ্যচিত্র উপস্থাপনা থাকবে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে রবিবার পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘অমর একুশের চেতনা এখন বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অনুপ্রেরণার এক অবিরাম উৎস।’
এতে আরও বলা হেয়, ‘বিশ্বের অনেক ভাষাই বর্তমানে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। একটি ভাষার বিলুপ্তি মানে পৃথিবীর মুখ থেকে একটি সংস্কৃতি, একটি জাতি ও একটি সভ্যতার বিলুপ্তি। সুতরাং বিশ্বের জনগণকে তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশসহ সব জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য তাদের আওয়াজ তুলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য – ‘বহুভাষিক শিক্ষার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার: চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ’ – খুবই উপযুক্ত; কারণ সরকার দীর্ঘদিন ধরে একটি ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি, বিপন্ন ভাষা সংরক্ষণ এবং তাদের মর্যাদা রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করেছি।’