খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ময়নাপুর গ্রামে ২৯টি পরিবারের বসবাস। গ্রামের বাসিন্দাদের শিশু সন্তানদের পড়াশোনার সুবিধায় ১৯৯১ সালে গড়ে ওঠে ময়নাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটি ২০১০ সালে নিবন্ধিত হয়। ২০১৩ সালে হয় সরকারীকরণ।
কিন্তু বর্তমানে স্কুলটির দ্বিতীয় শ্রেণিতে আছে মাত্র একজন শিক্ষার্থী। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে একজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন তিন শিক্ষক। এছাড়া উপজেলার আরও ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনের নিচে বলে জানা গেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার ২১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে আগের ১১০টির সঙ্গে নতুন জাতীয়করণকৃত ১০৪টি বিদ্যালয়ে ২২ হাজার ৬১৭ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। এর মধ্যে ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনের নিচে। এর মধ্যে ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মাত্র একজন শিক্ষার্থী। ময়নাপুর স্কুল ছাড়াও উপজেলার আরও ২০টি স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ এরও নিচে রয়েছে।
আরও পড়ুন: শিগগিরই দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিফিন চালু হবে: প্রতিমন্ত্রী
ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপ্না রানী বলেন, ২৯টি পরিবার নিয়ে আমাদের ময়নাপুর গ্রাম। গত পাঁচ বছর গ্রামে কোনো শিশু জন্ম নেয়নি। এতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়েনি।
ধীরে ধীরে স্কুলটির শিক্ষার্থী কমে এসেছে জানিয়ে ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার মন্ডল বলেন, ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠার সময় এ স্কুলে ১১৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। তখন এ গ্রামে ৪১টি পরিবার ছিল। ২০১০ সালে নিবন্ধিত হওয়ার পর শিক্ষার্থী ছিল ৬৫। তখন এ গ্রামে মাত্র ২৯টি পরিবারে বসবাস ছিল। বাকি ১২টি পরিবার গ্রাম ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। ২০১৩ সালে সরকারীকরণের পর শিক্ষার্থী ৫০-এর নিচে নেমে আসে। এরপর থেকে শিশু না জন্মের কারণে স্কুলে শিক্ষার্থী কমতে থাকে। এ বছর স্কুলে ভর্তি হওয়ার মতো ছয়টি শিশু ছিল। কিন্তু পাঁচ জনের জন্ম নিবন্ধন সনদ নেই। এ কারণে তারা ভর্তি হতে পারেনি। ফলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ওই একজন ছাত্রই রয়েছে।
আরও পড়ুন: রাণীশংকৈলে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই
ডুমুরিয়া উপজেলার ময়নাপুর ক্লাস্টারের পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী সাদিয়া আক্তার শোভা বলেন, ময়নাপুর গ্রামে ২৯টি পরিবার রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এ গ্রামে শিশু জন্মের হার খুবই কম। ২০১৯ সালে দুটি, ২০২০ সালে একটি, ২০২১ সালে একটি ও ২০২২ সালে একটি শিশুর জন্ম হয়। ফলে এ গ্রামে শিশুর সংখ্যা খুবই কম। গ্রামে জনবসতি কম ও পরিবার প্রতি সন্তান থাকায় নতুন শিশু নেয়ায় কম আগ্রহের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
এদিকে, শিক্ষার্থী কমে আসায় ময়নাপুর স্কুলটি বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিকদার আতিকুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী সার্ভের পর গত মার্চ মাস ময়নাপুর স্কুলটি বন্ধের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি।
খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. সিরাজুদ্দোহা বলেন, ওই স্কুলটি বন্ধ করে সেখানকার শিক্ষকদের অন্যত্র বদলির জন্য ঢাকায় চিঠি পাঠিয়েছি। সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় ৩৬১ বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার!